код

আকুপ্রেসার- বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা

Image result for akupresure

আকুপ্রেসার চিকিৎসা পদ্ধতি একটি সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা। প্রত্যেক মানুষ নিজেই অনুশীলনের মাধ্যমে নিজের রোগ নির্ণয়, নিরাময় এবং রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এ পদ্ধতি অনুশীলন ও প্রয়োগের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে নিজ বা নিজেদের রোগ নির্ণয় করে তা নিরাময় করতে পারেন খুব সহজেই। মার্কিন চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডাঃ উইলিয়াম ফ্রিটজ জেরাল্ড একদল উদীয়মান চিকিৎসক নিয়ে আধুনিক গবেষণায় আজকের আকুপ্রেসারকে বিকাশিত করেছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন অনেক জটিল ও কঠিন রোগও শুধু আকুপ্রেসার দিয়ে নিরাময় সম্ভব যা ঔষধে অনেক সময়ের প্রয়োজন পড়ে না। আকুপ্রেসার চিকিৎসা পদ্ধতি এমন একটি পদ্ধতি যা অনেক কঠিন রোগও খুব সহজেই নিরাময় হয়ে যায়। আমাদের দেশে এখন অনেক মানুষ আকুপ্রেসার করছেন, রয়েছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে দিনে দিনে আকুপ্রেসার লোকপ্রিয়তা পাচ্ছে।

আকুপ্রেসার কী?
আকুপ্রেসার চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে হাতের এবং পায়ের বিশেষ কিছু পয়েন্ট রয়েছে যা চাপ দিলে নির্দিষ্ট পয়েন্টের নির্দিষ্ট রোগ নিরাময় হয়ে যায়। স্রষ্টা তার মহান সৃষ্টিকে নিজে লালিত করেন তাই প্রকৃতির অংশ হিসেবে মানুষ যেন তার স্বাস্থ্য ঠিক রাখার উপায় জানা থাকে সেজন্য মানুষের সকল রোগের চিকিৎসা হাত ও পায়ের নির্দিষ্ট পয়েন্টগুলো দিয়ে রাখছেন।

মানুষ প্রকৃতির সন্তান, এই প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রকৃতির মধ্যে থেকেই প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে লড়াই সংগ্রাম করে বাঁচার অদম্য আকাঙ্খা মানুষকে বর্তমান অবস্থায় দাঁড় করিয়েছে। মানুষ তার প্রয়োজনে গাছপালা, লতাপাতা, লতা-গুল্ম, ফলমুল নিজের করে নিয়েছে। সেই সাথে তার আহারের জন্য ফলমূল অসুখ-বিসুখের জন্য নানান লতাপাতার কাছে আশ্রয় নিয়েছে। প্রকৃতির নানান খোয়ালে নানান আঞ্চলিকতায় স্বাদ ভিন্নতার কারণে মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট ভিন্নতায় তার গঠন এবং কাঠামোগত কারণের ও একটি স্বতন্ত্রতা সৃষ্টি করেছে। কিন্তু আকুপ্রেসার পয়েন্ট পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য এক ও অভিন্ন।

আকুপ্রেসারের ইতিহাস
সুশ্রুত সংহিতার মতে ভারতবর্ষে ছয় হাজার বছর আগে আজকের আধুনিক আকুপ্রেসার প্রচলন ছিল, মুণি ঋষিগণ তাদের রোগ নিরাময়ের জন্য এক গোপন বিদ্যা হিসেবে নিজের কাছে রাখতো, মুণিঋষির ভক্তকুল অসুস্থ হলে আকুপ্রেসারের মাধ্যেমে রোগ নিরাময় করতেন। সেই সাথে খাদ্যের প্রতুলতা এবং পথ্যের প্রাপ্তির জন্য ভক্তের থাকার স্থান বদলের নির্দেশ দিতেন, সেই আলোকে ভক্ত তার জন্য উপযোগী স্থান এবং উপযোগী পথ্য যেখানে আছে সেখানেই থাকতেন। পরবর্তীকালে এই আকুপ্রেসার শ্রীলংকায় যেয়ে আকুপাংচার নামধারণ করে চীনের ব্যাপক পরিচিতি পায়। আকুপ্রেসার বিভিন্ন জাতির কাছে বিভিন্ন নামে যা আকুপ্রেসার, রিফ্লেক্সোলজি, সুজোক, জোন থেরাপী ইত্যাদি নামে প্রসার পায়।

আকুপ্রেসার শরীরে কীভাবে কাজ করে?
এই চিকিৎসা পদ্ধতি শরীরে অবস্থিত বহুমাইল বিস্তৃত স্নায়ু দ্বারা যোগাযোগ ব্যবস্থায় জৈব বিদ্যুৎ তৈরী করার মাধ্যমে কাজ করে। মানুষের শরীরে রক্তের ধীর গতি এবং বিদ্যুৎ সঞ্চালনে বাধাই রোগ। মানবদেহ এক আশ্চর্য সুপার কম্পিউটার। এর প্রতিটি অঙ্গ একে অপরের সাথে মিলে মিশে শরীরটাকে ঠিক রাখার জন্য অবিরাম কাজ করে থাকে। এই যন্ত্রগুলো নিরলসভাবে কাজ করে তা শত বছরেরও বেশী টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট উপযোগী। এই আশ্চর্য কম্পিউটারটি চালানোর জন্য যা প্রয়োজন তা হলো সুষম বিদ্যুৎ যা শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী বিদ্যুৎ প্রবাহ ঠিক থাকে। তা না থাকলেই শরীরে নানান জটিলতা সৃষ্টি হয় এবং রোগের উৎপত্তি শুরু হয় যা জীবনের প্রাণহানীর মূল কারণ।

Image result for akupresure
আকুপ্রেসারের মাধ্যমে যে সমস্যাগুলো দূর কর যায়–
ঘাড়ের ব্যথা, স্পন্ডলাইসিস, কোমরের ব্যথা (লাম্বার), আর্থারাইটিস, অস্ট্রোপ্রোসিস, হাঁটুব্যথা, মাথাব্যথা, সাইনাস, মাইগ্রেন, হার্টের সমস্যা, লিভারের সমস্যা, ফুসফুসের সমস্যা, এজমা, পুং ও স্ত্রীতন্ত্রের জটিল সমস্যাগুলো অত্যন্ত সফলতার সাথে কাজ করে। এছাড়া নার্ভের যে কোন সমস্যা, প্যারালাইসিস, স্ট্রোক পরবর্তী পুনর্বাসন, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েডের সমস্যা ইত্যাদি।

আকুপ্রেসার করার সুবিধা

১. এই চিকিৎসা নিজেই রোগ নির্ণয় করতে পারবে (হাতের তালুতে চাপ দিলে যেখানে ব্যথা অনুভব হবে বুঝতে হবে সেখানেই সমস্যা রয়েছে, সেই ব্যথা দূর করার জন্য আকুপ্রেসার করতে হবে)।
২. হাতের তালুতে ও হাতের উপরিভাগেই সব সমস্যার সমাধান
৩. বয়সের কোন ব্যাপার নেই, সব বয়সী মানুষই আকুপ্রেসার করতে পারবে
৪. কোন খরচ নেই, কোন রাসায়নিক ডায়াগনসিস লাগে না
৫. সময়ের কোন ব্যাপার নেই, যখন তখন যে কোন অবস্থাতেই আকুপ্রেসার করা যায়।

কীভাবে আকুপ্রেসার করবে?
পদ্ধতিগতভাবে আকুপ্রেসার হলো একটি স্বতন্ত্র চিকিৎসা পদ্ধতি। এই চিকিৎসা পদ্ধতি জানা থাকলে নিজেই নিজের শরীরের অবস্থা জানা এবং অসুস্থ হলে তা থেকে নিরাময়ের জন্য এর চাইতে সহজ এবং পরিপূর্ণ পদ্ধতি পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই যা মানুষের জন্য স্রষ্টার দেয়া এক অন্যন্য স্বাস্থ্যরক্ষা পদ্ধতি। হাতের এবং পায়ের বিশেষ পয়েন্টে চাপ দিয়ে জানা যায় বর্তমান শরীরের কী অবস্থা এবং কোন জটিল বা জন্মগত রোগও আকুপ্রেসার দিয়ে নিরাময় সম্ভব।

শরীরে যে কোন সমস্যাই থাক না কেন ক্রোনিক কিংবা একিইউট তা আকুপ্রেসার দ্বারা আপনার শরীরের জৈব বিদ্যুৎ দ্বারা ধীরে ধীরে সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম। সেইজন্য নিজের হাতের তালুতে পয়েন্টগুলো লক্ষ করুন, তারপর প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিটি পয়েন্টে ৫০ টি করে চাপ দিন। চাপ হবে সহ্যক্ষমতার মধ্যে এবং একটি চাপের সাথে আরেকটি চাপের মধ্যে ১ সেকেন্ড সময় নিয়ে চাপ দিতে হবে। এতে কাজ হবে ভাল। প্রতিদিন দুবেলা কমপক্ষে একটি প্রেসার দেওয়ার অন্তত ৮ ঘণ্টা পর আরেকবার চাপ দিতে হবে। সপ্তাহে ৬ দিন আকুপ্রেসার করতে হবে, একদিন বিরতি দিয়ে আকুপ্রেসার করতে হবে। চাপের ক্ষেত্রে একটু এদিক ওদিক হলেও বুঝতে পারবেন যে, যেখানে ব্যথা অনুভব করবেন সেখানেই চাপ দিবেন। ছবিতে পয়েন্টগুলো দেওয়া আছে প্রয়োজন অনুযায়ী আকুপ্রেসার করুন।

সাবধানতা
১. গর্ভবতী মায়েরা এই আকুপ্রেসার করবেন না।
২. ভরা পেটে আকুপ্রেসার করা যায় না।
৩. দিনে দুবারের বেশি আকুপ্রেসার করা অনুচিত।
৪. একবারে ২০ মিনিটের বেশি আকুপ্রেসার করা যাবে না।
৫. একটি পয়েন্টে ২ মিনিটের বেশি আকুপ্রেসার করা যাবে না।
আমাদের দেশে আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে আকুপ্রেসার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। যা মানুষ নিজে নিজেই প্রয়োগ করে নিজের শরীর সুস্থ রাখতে পারবে। যারা একাধিক রোগে ভুগছেন এবং একাধিক ঔষধ সেবন করছেন তারা নিয়মিত আকুপ্রেসার করলে ঔষধ খাওয়া বাদ দিতে পারবেন। আর এমন কিছু সমস্যা রয়েছে তা ঔষধেও সারে না কিন্তু আকুপ্রেসারে সারবে যেমন ঘাড়, কোমর ও নার্ভের জটিল সমস্যাগুলো। তাই আকুপ্রেসার ব্যাপক প্রচার প্রয়োজন।





আলমগীর আলম
আকুপ্রেসার বিশেষজ্ঞ
ন্যাচারোপ্যাথি সেন্টার,
ফ্লাট – বি -৭, ৮৩ নয়া পল্টন (গাজী নীড়), ঢাকা।


ড্রিমমেকার অনলাইন ম্যাগাজিন
Latest posts by ড্রিমমেকার অনলাইন ম্যাগাজিন (see all)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *