‘আমি এমন কোনো উৎসবে অংশ নেবো না যেই উৎসব শুধু একটা সম্প্রদায়ের; যেই উৎসব সার্বজনীন নয়।’

আমি এমন কোনো উৎসবে অংশ নেবো না যেই উৎসব শুধু একটা সম্প্রদায়ের; যেই উৎসব সার্বজনীন নয়।’ সন্ধ্যাটা রবিবার। ১৩ অক্টবর ২০১৯। আজ প্রাবারনা পূর্ণিমা, আজ লক্ষিপূজা আজ কোজাগরি। ছোট বেলা থেকেই এমন এক পরিবেশে আমি বড় হয়েছে যেখানে কোনো সাম্প্রদায়িকতা দেখিনি। আমার পাশের বড়ুয়া পাড়ায় ফানুশ উড়ানো উৎসবে মিলিত হয়েছি বড়ুয়া বন্ধুদের সাথে; খেয়েছি নাড়ু-মুড়ি আরো কত কী! দূর্গৎসবে ঢাকের তালে তালে নেচে বেড়িয়েছি হিন্দুবন্ধুদের হাত ধরে। আর ঈদৎসবে বুকে বুক মিলিয়েছি ধর্ম-বর্ণ-জাতি ভেদে শুধুই মানুষের সাথে। মানুষইতো মানুষের বন্ধু। ধর্ম-যাত-পাত বা সম্প্রদায় এসব কখনই মাথায়ও আসেনি। কিন্তু আজ গালে চড় দিয়ে কতিপয় মানুষ বুঝিয়ে দিল -তুই মুসলিম, আমি বড়ুয়া আর ও হিন্দু। ভীষণ আঘাত পেয়েছি; ছোট হয়েছি কলিগদের সামনে। আহত হয়েছি অসম্ভব রকমের।
বাড্ডা বৌদ্ধ বিহারে ফানুশ উড়ানোর প্রবারণা পূর্ণিমায় উৎসবের অংশ হতেই মহানন্দে আমরা ৩জন যাই। প্রাধান গেইট বন্ধ। পাশের গলিতে একটাই রাস্তা। জানতে চাইলাম এটা প্রবেশ গেইট কিনা? আমাকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হলো- ‘আপনার নাম কি’? নাম বল্লাম। জানিয়ে দেয়া হলো- ভেতরে ঢুকতে পারবো না। সাথে থাকা বৌদ্ধ বন্ধুটিকে দেখিয়ে বল্লাম – ও বড়ুয়া; শুধু সে ঢোকার অনুমতি পেলো। তারপর আবারো অনুরোধ -‘আমরা আসলে সবাই এক সাথেই এসেছি, আমরা উৎসবটার অংশ হতে চাই।’ কিছুক্ষণ অনুরোধের পরে যদিও অনুমতি পেলাম; কিন্তু উৎসব মাঠে ঢোকার প্রধান গেইটে আবারো বিপত্তি। কোনো ক্রমেই ভেতরে ঢোকা যাবে না। আমি বল্লাম- ‘প্রয়োজনে আমাকে চেক করুন। তবুও ভেতরে প্রবেশ করতে দিন’। তাদের সাফ জবাব- ‘ভেতরে যাওয়া যাবে না’। বড়ুয়া বন্ধুটিকে দেখিয়ে বল্লাম- ‘তবে ওকে যেতে দিন’। তার অনুমতি মিললো-। কিন্তু সেও আমারই মত হতবিহ্বল। মুখে রাজ্যের কষ্ট-বিষণ্নতা আর ঘৃণা নিয়ে বলছিল- ‘‘এধরনের সাম্প্রদায়িক উৎসব আমার খুব অপছন্দের। ছিঃ। আজকের এই অসুন্দর সাম্প্রদায়িক উৎসব আমি বয়কট করলাম। এতে আমার কোন আক্ষেপ নেই।’’ আমরা Amlan Barua কে অনুরোধ করলাম যে, ‘আমরা দুজন বাইরে থাকি আপনি ভেতরে যান।’ কিন্তু অম্লান আমাদের সম্মানার্থে এবং এই (স্থানের) উৎসব বয়কট করে ভেতরে যায় নি।
পুলিশ এবং গেইটে যারা ছিলো তাদের আচরণ বিশ্রী রকমের খারাপ ছিলো। ভীষণ মারমুখি ভঙ্গি। এক পুলিশ একজনকে এমন ভাবে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো যে সে সিটকে পড়লো কমপক্ষে পাঁচ হাত দূরে। মহিলা- শিশু আর যুকদেরও ধাক্কা দিয়ে গেইটের সামনে থেকে সরিয়ে দিচ্ছিল পুলিশ, আরনসার আর দায়িত্বরত একজন।


আমার ভীষন কষ্ট হচ্ছিল। সব সময় বিশ্বাস করে আসছি যে, ‘ধর্ম যার যার আর উৎসব সবার। বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। এদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়ক চেতনায় বিশ্বাসি।’ কিন্তু ঢাকার বাড্ডার মত একটা স্থানে এই আচরণ আর সিস্টেম দেখে আমি/ আমরা ব্যাথিত, বিষণ্ণ আর হতাশ।

রাষ্ট্রের কাছে প্রশ্ন- ‘এটা কী করে সম্ভব!? বাড্ডা এলাকার উৎসব আয়োজকদের কাছে প্রশ্ন- ‘উৎসব কারো একার হয় কিভাবে!?’ আমার বৌদ্ধ বন্ধুদের কাছে প্রশ্ন- ‘এর প্রতিবাদ তুমি /তোমরা করবে তো?’(ভিডিওতে পুরো ঘটনা দেখতে পারেন।বিঃদ্রঃ- এই ভিডিও থেকে আমার কোনো ইনকাম হবে না। সুতরাং শেয়ার করতে পারেন বিবেকের দরজায় একটুও কড়া নাড়লে। ধন্যবাদ একক্ষণ যারা পোস্টটি পড়েছেন বা ভিডিও ডিটেইল দেখেছেন।)লেখক :ফরিদ উদ্দিন মোহাম্মদ। একজন নাট্য নির্মাতা।

One thought on “‘আমি এমন কোনো উৎসবে অংশ নেবো না যেই উৎসব শুধু একটা সম্প্রদায়ের; যেই উৎসব সার্বজনীন নয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *