আমার ৭ বছরের ছোট ছেলে রেহানের অক্টোবরের ১৪ তারিখে জন্মদিন।ছেলের জন্মদিন নিয়ে আমি আর স্ত্রী নন্দিতা খুব এক্সাইটেড।একটা বড় পার্টির আয়োজন করেছি সন্ধ্যা বেলা।মূলত এই পার্টির আয়জনের একটিই কারণ সেটি হলো আমরা একটি নতুন ফ্ল্যাট কিনেছি।ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট।ফ্ল্যাটের উদ্বোধণ অনুষ্ঠান করাটা অনেকটা সো অফ হয়ে যায়।কিন্তু সো অফ আমরা করবো এক্সকিউজ হলো রেহানের জন্মদিন। আমি কার্ড নিয়ে নিয়ে বিভিন্ন গেস্টের বাসায় গিয়ে দিয়ে আসছি। বড় চাচা আলতাবের বাসায় যাবো নাকি যাবো না তা আমি ভাবছি।রাস্তায় জ্যাম অনেক, গাড়িতে বসেও আছি।তাই নন্দিতাকে কল দিলাম।নন্দিতা আমাকে বলছে–মুয়ীদ… ভুলেও যদি সে আসে আমি তোমার সাথে সংসার করবো না!
লেখক : মোসাব্বের হোসেন মুয়ীদ |
দেখো.. শুধু আমরাই জানি ঘটনাটা..আমার ফ্রেন্ড আর বাকিরা জানে না…এই অনুষ্ঠানে সে না থাকলে সবাই জিজ্ঞাসা করবে তার কথা!
-তোমার সাহস কি করে হয় ঐ ফাউল লোকটাকে ডাকবে আর আমি পারমিশন দিব!!!…
-একটা দিনই তো!
-মুয়ীদ…আমি থ্রেট দিচ্ছি না…ডিরেক্ট বলছি যদি তাকে আনো আমি ডিভোর্স দিব তোমাকে…
নন্দিতা কল কেটে দিল।ওর এত বারণের পরেও আমি গাড়ি নিয়ে চাচার বাসায় গেলাম।চাচার বাংলো বাড়িতে গিয়ে দেখি মানুষের ভিড়।এগিয়ে যেতেই লোকে মুখে শুনি ৮ দিন হলো চাচা দরজা খুলেন না।বাড়ির ভিতর থেকে বাজে গন্ধ আসছে।আমি দরজা ভাংতে চাইলে সবাই বলছে যে পুলিশ আসুক।তারাই দরজাটা খুলুক।পুলিশ এসে দরজা খুলতেই চাচার বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখি তার গলিত লাশ ইজি চেয়ারে।লাশ অটোপসি রেজাল্টে জানা গেল যে সেই ইজি চেয়ারেই চাচা হার্ট এ্যাটাক করে মারা গেছেন।তারাহুরো করে সেদিন রাতেই লাশ মর্গ থেকে এনে দাফন করলাম।
৩ দিন পর…
নন্দিতার সাথে আমার ঝগড়া বেজেছে।চাচা মারা গেছেন তাই আমি রেহানের জন্মদিন পালন করতে চাইছি না।নন্দিতা আমাকে চিল্লিয়ে বলছে–মুয়ীদ!.. তোমার এই চাচা আমাকে রেইপ করার ট্রাই করে!.. আর তার মৃত্যুতে তুমি ছেলের বার্থ ডে পালন করবে না!.. ওয়াও… ওয়ান্ডারফুল…
-দেখো তার জন্য আমরা কিন্তু চাচার থেকে ডিপার্ট হয়ে গিয়েছিলাম….
-নাহ!..তোমার সাথে সংসার করা যাবে না!…তুমি তো একটা কাপুরুষ!… নিজের বউকে যে রেইপ করতে চায় তার জন্য এত দরদ!..
-নন্দিতা..প্লিজ!..
-এ্যাই তোমার চাচার সাথে শুইলে সে কি তার সব কিছু তোমার নামে লিখে দিত!?…নাকি চাচা ভাতিযার চুক্তি হয়েছিল!?
-নন্দিতা লিমিট ক্রস করছো তুমি!
-লিমিট আমি ক্রস করছি!..
-নন্দিতা এসে আমার শার্টের কলার টেনে ধরে বলছে-
-কি..এ্যান্সার দিচ্ছো কেন!?..লিমিট আমি ক্রস করেছি নাকি তুমি?
-তুমি করেছো!..শুনো ৮ টা বছর ধরে আমি এই কথাটা নিজের মাঝে রেখেছি!…শুনো তুমি যে চাচার প্রতি রেইপের নাটক করো তা আমি জানি!…
-নাটক!..বাহ!
-হ্যা…চাচার বাসার সিসিটিভি ফুটেজ দেখি আমি!…
নন্দিতা কলার ছেড়ে দিয়ে একদম চুপ হয়ে গেল।আমি নন্দিতাকে বললাম-
-কি কলার ছেড়ে চুপ হয়ে গেলে যে!… শুনো… আমাকে চাচা ফুটেজ দেখান ৪ মাস পর… কিন্তু ততদিনে তুমি প্রেগনেন্ট হয়ে যাও…তোমার গর্ভে ছিল আমার সন্তান…ছিহ সেপারেট হওয়ার জন্য কি জঘণ্য নাটকটাই না করেছিলে!…
নন্দিতা কাঁপা শুরু করেছে।সে কিছু বলছে না।সে রুম থেকে চলে গেল।আর আমি হতাশ হয়ে গেলাম।কেননা,এই সিসিটিভি ফুটেজ নাটক ছিল।আমি আন্দাজে ঢিল মারি আর নন্দিতা ধরা পরে গেল।চাচার বাসায় যেদিন তার লাশ পাই সেখানে তার ডায়েরি পাই।সেটি তিনি অন্তিম সময়ের নিকটে লিখা শুরু করেন।সেখানে তিনি নন্দিতার নাটকের জন্য ছেলে সমতূল্য ভাতিযার সাথে দেখা করতে পারে না, এমনি আমি কল রিসিভ করি না এইসব নিয়ে আফসোস করে লিখে ন।চাচাএকবার আমার অফিসে আসেন।আমি তাকে বের করে দেই।এসব মনে করে কাঁদছি আমি।
আজ সকাল বেলা আমি আমাদের ফ্ল্যাটের ড্রয়িং রুমে চাচার একটা বড় ছবি লাগাই।নন্দিতার সাথে কথা হয় না ৩ দিন হয়েছে।আজ শুক্রবার।রেহান বাসায় আর এদিকে হুট করে কলিংবেল বাজলো।নন্দিতা দরজা খুলতেই আমি দেখলাম চাচার লিগ্যাল এ্যাডভাইজার এ্যাডভোকেট আসিফ ইমতিয়াজ এসেছেন।তিনি আমাকে চাচার সম্পত্তি বাংলো বাড়ির ডকুমেন্ট বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন।তিনি চলে যাওয়ার পর নন্দিতা আমাকে বলছে-
-মুয়ীদ… এগুলা সেইল করে দিয়ে আমরা কানাডা শিফট হই?.. তোমার অফিসের তো কানাডাতেও বাঞ্চ আছে…
-আমার চাচা এখন বেঁচে নেই… এগুলো তার স্মৃতি.. আমি এগুলো বিক্রি করবো না…
-রেখে দিয়ে কি করবে?..কাজে লাগাও…
-আমি রেখে দিব কখন বললাম?…আমি সব চাচার নামে দান করবো!..
-মুয়ীদ!…পাগল হলে নাকি?
-আমার সম্পত্তি আমি যা খুশি তাই করবো!
-আমি তোমার স্ত্রী না?
-আপাতত আছো…খুব শীঘ্রই আমাদের ডিভোর্স হচ্ছে নন্দিতা…
-মুয়ীদ…ছেলের কি হবে?
-ও আমার কাছে থাকবে… তুমি বিয়ে করে ফেলো একটা.. যথেস্ট সুন্দরি তুমি…রুপে যে কেউ পাগল হবে… বোঝা যায় না তোমার বয়স ৩০…
-মুয়ীদ..আমার ভুল হয়ে গেছে…প্লিজ…ডিভোর্স দিয়ো না….
-এটা ছাড়া গতি নাই..
-মুয়ীদ!… তাহলে ছেলেটা থেকে আমাকে আলাদা করো না…
-তোমার কাছে থেকে নাটক শিখবে আমার ছেলে?…শুনো একটা হুরের যে মর্যাদা আছে তাও তোমার নাই… কেউ যদি বলে হুর আর আমার বউ কাকে আমি সম্মান দিব…আমি রাস্তার সেই হুরকে বেছে নিব…
-আমি হুর!?
-সরি… তোমাকে হুর বললে তো হুরদেরও অপমান….. তোমাকে কি বলে ইন্ডিকেট করবো সেই শব্দ আমার কাছে নাই…
নন্দিতা কিছু না বলে দোতলায় চলে গেল।আমি নিচতলায় ঘুমিয়ে পরলাম।হুট করে ছেলে রেহান ডাক দিল আমাকে।সে আমাকে বলছে-
-বাবা…
-কি?
-মা না ওরনা গলায় প্যাচিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে!
আমি দৌড়িয়ে দোতলায় গিয়ে দেখি নন্দিতা ফাঁসি দিয়ে মারা গিয়েছে।আমি একদম স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
৩ মাস পর…
ছেলে রিহানকে নিয়ে আমি কানাডায় শিফট হচ্ছি।সব বিক্রি করে দিয়েছি।চাচার দেওয়া বাংলো বাড়িতে থাকবো যে কিন্তু সেখানেও বাজে স্মৃতি আর আমার নিজের কেনা সেই ফ্ল্যাটেও।একটা নতুন জীবন শুরু করবো।আসলে আমি নন্দিতাকে তালাক এসব কিছুই দিতাম না।রাগের মাথায় ওকে ওসব বলেছিলাম।কথাটা সংযুত রাখা শিখতে হবে।কথার ছুড়ি বড় বড় দূর্ঘটনা ডেকে আনে।এই রাগের মাথায় বলা কথাগুলোর জন্য বড় বড় ফাটল হয়।রাগ চলে যায় কিন্তু তিতো কথাগুলো বেঁচে থাকে।
(কাল্পনিক)
লেখক : মোসাব্বের হোসেন মুয়ীদ
Latest posts by ড্রিমমেকার অনলাইন ম্যাগাজিন (see all)
- অপরাজিতা
সিরাজাম মনিরা
- জুলাই ৩০, ২০২৪ - অন্য পৃথিবীর গল্প
রোদ্দুর
- মার্চ ২২, ২০২৪ - ইদানীং
মাসুদ করিম
- ডিসেম্বর ৭, ২০২৩