код

প্রিয় জবা। চিঠি। ফরিদ উদ্দিন মোহাম্মদ

প্রিয়জবা,
কিছুটা যন্ত্রনা নিয়ে আজ এই কুয়াশার ছায়ায় মৃদু চাঁদনী আভা মধ্যরাতে তোকে লিখতে বসা। তুই হয়তো জানিস না কুয়াশা যে মেঘের চেয়ে ভয়ংকর হতে পারে। মেঘের পায়ে যে নুপূর পরিয়েছিলাম বিগত জন্মে; তার রিনিঝিনি এখনো কি শুনতে পাস না ? আর কুয়াশারা মিলে যায়, উবে যায়, লীন হয়ে যায় খুব তোর মতই রৌদ্রের আহ্বানে। তাই বলে আমার কুয়াশা কাব্য শেষ হয়নি সেই জন্মে; বিগতের ইতিহাস ঘেটে আজ আবারো বুঝতে পারলাম তুই আমার মিতা ছিলিনা কোনো কালেই। তাই মেঘবুকে আমাদের নীল হয়ে ওঠা এক মহাকাব্যিক অভিরূপ। আর তু্ই গানের কলি নিয়ে মালা গাঁথতে বসে যেতি সূরের ব্যঞ্জনায়। অথচ আমার কবিতা অস্পৃশ্য পাণ্ডুলিপি । আমাদের কবিতাগানে নির্মাণ শুরু হতো চির নতুন সংসার; চারুলতা।
আর কুয়াশা, বারবার শুধু শিশির হয়; বারবার শুধু দুষ্টু খুকির মত তোকে, আমাকে হিম করে দিয়ে হারিয়ে যেতো। তুই বরাবরই আবার জেগে উঠতি; এখনো উঠিস। আর আমি সেই কবে থেকে হিম হয়ে আছি তুই টেরও পেলি না জবা।

Image result for love illustrationযে রাতগুলো জোসনার সাথে পাল্লা দিয়ে শিশিরেরও সম্মিলন ঘটায় ; আমি বড় পালিয়ে যেত চাই সেই রাতের সন্ধিক্ষণে। জোসনা, শিশির আর মেঘ কিছুই আমার পছন্দের না, তা তুই জানিস; তবুও আমার ছোট্ট আকাশটাকে রেহাই দিলিনা এসব বিদঘুটে যন্ত্রনা থেকে। আর তুই কী নিরবে রক্তজবা হয়ে লাল হয়ে যাস মাঝ রাতে আমি টের পাই তা।

সত্যিই সেদিন তোকে রক্তজবা ভেবে ভুল করিনি;তুই আমার হাত থেকে নিতে চাইলি এক ঝাঁক জোনাকি। কী লুকিয়েও তোর চোখ থেকে বাঁচতে পারলাম না। জোনাকিগুলো উড়ে গেলে যে রক্তজবা হয় তা সেদিনই প্রথম জানলাম। তোর ওড়নায় জড়িয়ে নিলি এত এত আলোর ফোয়ারা; ভেবেছিলাম চাঁদ বুঝি অন্য চাঁদের হয়ে জড়িয়ে আছে। অথচ, তোর বুকের ঠিক মাঝখানটায়, হ্যাঁ যেখানে আমার হাজারো চুমু লেগে আছে, ঠিক সেইখানে জড়ালি যখনি জোনাকি গুলো; কেমন লাল হয়ে গেছে তোর মনে পড়ে? আমি ভেবেছিলাম তুই জবা, আর জবা মানেইতো রক্তজবা, তাই বুঝি এমন হোলো। এরপরে আর একটিও চুমু দিতে পারিনি তোর বুকের ঠিক মাঝখানটায়; যেখানে অপরিসীম সৌন্দর্য নিয়ে রাজ্য স্থাপন করে আছে ছোট্ট একটি লালচে তিলক। হাত দিয়ে দেখ তোর ফর্সা বুকের তিলকে আমার এঁকে দেয়া ক্ষতের চিহ্ন এখনো টের পাবি।

জবা, আমার এইকিছুটা যন্ত্রনারউৎপত্তি স্থল ঠিক কোথায় তা বুঝতে পারছি না। তুই কি এখনোমাইন্ড রিডকরতে পারিস ? থাক সে কথা। আমার কিছুটা কষ্টের কথা শুনবি তুই ? আজ বড় একা লাগছে রে। বেশ অসহায় মনে হচ্ছে নিজেকে। সত্যি বলতে জীবনের এমন এক দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছে গেছি যে সামনে বা পেছনে কোথাও যাওয়ার আর জায়গা নেই। সুবিশাল সমুদ্রের মাঝামাঝি এসে আটকে আছে আমার জাহাজ; না কোনো বালুচরে আটকায়নি, অথবা পথ ভুলে সঠিক পথের উদ্দেশ্যে নোঙ্গর ফেলেও নয়। এই থমকে যাওয়া জীবন নিয়ে কেনো ভালো লাগবে বল পূর্ণিমা, মেঘ অথবা শিশিরের আস্তরন?

এক শিশিরের সন্ধ্যায় তুই আমাকে বৃষ্টি ঝরাতে বল্লি; আর আমরা পরস্পর উষ্ণতা বিনিময়ে সত্যিই বৃষ্টি ঝরালাম ভীষণ নিরবে শুধুমাত্র আমাদের ব্যক্তিগত শহরে। না জবা, আমার কোনো আক্ষেপ নেই এখন বৃষ্টি, শিশির, জোনাকি অথবা তোর লালচে তিলকের জন্য। আমি শুধু মাঝ সমুদ্রে নোঙ্গর ফেলা আমার প্রাগৈতিহাসিক জাহাজটাকে উদ্ধারের কৌশল নিয়ে ভাবছি।

কবিতারাও সংসার পাতে না এখন আমার জানালায়। আর পাখিদের চড়াইভাতি খেলাও খুব অকস্মাৎ ফুরিয়ে গেলো। অথচ আমাদের লেনদেন কতটা বাকি ছিলো, মনে পড়েজবা, তোর প্রতি শুভ কামনা রইলো। তুই আমৃত্যুই রক্তজবা হয়ে থাক। ভালো থাকিস অনেক। আর আমার উত্তরণের কোনো সূত্র যদি তোর কাছে থেকে থাকে তবে পাঠিয়ে দিস সেই সে তোর ওড়নায় জড়ানো এক ঝাক লাল জোনাকির পায়ে পায়ে; আমি ঠিকই পড়ে নেবো।


ইতি

আমি

আমার আজন্মবদ্ধ লাল ডাকবাক্সথেকে নেয়া।

ফরিদ উদ্দিন মোহাম্মদ


ড্রিমমেকার অনলাইন ম্যাগাজিন
Latest posts by ড্রিমমেকার অনলাইন ম্যাগাজিন (see all)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *