মুনিয়া

মাসুদ করিম

এক

সাল ৩০৩০ ।

রাতের আকাশে বিশাল আকারে পৃথিবী উঠেছে । পৃথিবীতে থাকলে চাদ উঠতো, কিন্তু আমি আছি চাঁদে, তাই আকাশে পৃথিবী উঠেছে । মানুষদের মাঝে সম্মানিত, ক্ষমতা সম্পন্ন লোকজন চাঁদে বসবাসের সুযোগ পায় । যাদের বলা হয় মুনিয়া । টোটাল ছয় লক্ষ ত্রিশ হাজার মুনিয়ার মধ্যে আমিও একজন মুনিয়া । গত দশ বছর যাবৎ আমি বিভিন্ন সময় ধরে চাঁদে আছি । আমাদের সৌর জগতের তিন জায়গায় এখন মানুষ বাস করছে । পৃথিবী আর চাদ ছাড়া আরেকটি জায়গা হলো মঙ্গল গ্রহ বা মার্স । মঙ্গলে সাধারণত অমঙ্গলকারী মানুষদের বসবাস । পৃথিবীর অপরাধীদের জেলখানা বা আবাস স্থল মঙ্গলগ্রহ । এক আহম্মক গোষ্ঠী মুনিয়ার মর্যাদা পাওয়ার জন্য পৃথিবীতে আন্দোলন করেছিল, তাদের পূর্বপুরুষ নাকি বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে চাঁদে জমি কিনেছিল কোন এক ওয়েবসাইট থেকে । তাদের সবকটাকে ধরে মঙ্গলে ছেড়ে দেয়া হয়েছে । চাদে মুনিয়াদের থাকার জন্য হাই-এন্ড , টপ নচ ডিজাইন করা হয়েছে , কিন্তু মঙ্গল গ্রহের ব্যবস্থা এখনো উন্নয়নশীল । মঙ্গলগ্রহে টিকে থাকা কষ্টদায়ক ।

আমার রুম সাউন্ড সিস্টেমে এআই এলেন কথা বলে উঠলো, সম্মানিত রোদ্দুর আহমেদ , শুভ সন্ধ্যা ! আপনার সাথে, সম্মানিত কস্তুরি বেগম দেখা করতে চাচ্ছেন । ( বহুবছর আগে এলেন মাস্ক নামক এক প্রযুক্তি প্রেমী ব্যবসায়ীর নাম অনুসারে মুনিয়ার এআইকে এলেন নামে নাম করন করা হয়েছে । )

কে সে ? সে যেই হোক, তাকে দশ মিনিট পর টাইম দাও, আমি আমার বসার ঘরে যাবো দশ মিনিট পর, আমার হলোগ্রামিক ক্ষেত্রতে তাকে এক্সেস দিয়ে রাখো ।

এলেন বলে উঠলো, কস্তুরি বেগম সম্প্রতি মুনিয়া হয়েছেন, সে আপনার ভক্ত । গিফট নিয়ে এসেছেন । সে স্ক্রিনে না সে সরাসরি আপনার সাথে দেখা করতে চান । সে চাঁদের এড়িয়া সেভেন্টিন থেকে অলরেডি রওয়ানা দিয়ে দিয়েছেন । তার আসতে তিন মিনিট আঠারো সেকেন্ড লাগবে ।

ইন্টারেস্টিং ! ঠিকাছে আমার অত্যাবশকীয় বস্ত্র পরিধানের জন্য কিছু সময় লাগবে । তাকে ভিজিটিং পয়েন্টে বসাও ।

দুই

কস্তুরি বেগম সুন্দরী মহিলা, এলেন আগেই তথ্যটা দিতে পারলে, চুলটা ঠিকমতো চিরুনি করে সামনে আশা যেত, ভালো শার্ট পড়া যেত । কস্তুরির হাতে কোন গিফট নাই, সে তার পার্সটা পাশে রেখে , শক্ত স্বচ্ছ কাচের দেয়াল দিয়ে বাইরের কালো আকাশ দেখছে ।

আমি বললাম, শুভ সন্ধ্যা । কস্তুরি বেগম ঘুরে তাকিয়ে বলল , শুভ সন্ধ্যা । তার চোখে ভক্তির বা ভক্তের কোন ভাব নাই, যে ভাব আছে তা অন্য কোন ।

আমি বসতে বসতে বললাম, মুনিয়ার নতুন সদস্য হিসেবে আপনাকে স্বাগতম কস্তুরি বেগম ।

ধন্যবাদ । কেমন আছেন আপনি ?

খারাপ থাকার কোন কারণ ঘটেনি কয়েকদিনের মধ্যে । ভালোই আছি ।

আমাকে কি আপনার পরিচিত লাগছে ?

হ্যাঁ, তা তো লাগছেই, বাঙালি বলে হয়ত । এলেন বললো আপনি আমার ভক্ত । কিসের ভক্ত আপনি, আমার সমাজ সেবার নাকি, বিজ্ঞানী বক্তিৃতার, নাকি অ্যাটমিক এনার্জি প্রক্রিয়াজাত করণের আমার আবিষ্কার ?

ওগুলা একটারও না ।

তাহলে?

আপনার কবিতার ।

বলে কি, আমি কি কবিতা লিখতাম নাকি ?

হ্যা লিখতেন, আপনি মুনিয়া হওয়ার পর আপনার মস্তিষ্ক ফিলটার করেছেন । একটা অংশর স্মৃতি ফিলটার আউট করে দিয়েছেন । তথ্যটা গোপন , কিন্তু আমি এটা জেনে নিয়েছি ।

বলেন কি, ইন্টারেস্টিং ।

হমম, ইন্টারেস্টিং । আপনার লেখা কবিতা আছে কয়েকটা আমার কাছে, ওয়েট শোনাচ্ছি একটা আপনাকে ।

কস্তুরি তার পুরানো ডায়রি বের করে পড়তে লাগলো –

সেদিন থেকে
আমার মনে
তোমার কথা ভাবিয়া গোপনে
তীব্র ঝড়ে উড়ে
বিজন মরুতে
তোমার নাম লেখা মরীচিকা ঘিরে
আমি আবতীর্ত হই
যেন নির্জন সব পৃথিবীর বই
শুধু তুমি আর আমি
তার প্রতি পৃষ্ঠায়

লুকিয়ে লুকিয়ে রই ।।

ওরে, এই ফালতু কবিতা আমার লেখা, এটা তো একটা ছেলে মানুষী কবিতা ।।

হুম । যখন লিখেছিলেন তখন ছেলে মানুষ ছিলেন । তবে এই কবিতা মোটেও ফালতু না । পৃথিবীতে যে গুটিকয়েক লোক কবিতা লিখতো আপনি তাদের মাঝে অনন্য ছিলেন ।

হোয়াট দা হেক ! বলে কি ।

ইয়েস । আপনার একটা কবিতা পৃথিবীর সমগ্র বাংলা বিভাগ পাঠ্য । যাইহোক সেগুলা আমি বলতে আসি নাই ।

কি বলতে আসছেন আপনি ?

এই ডায়রিটা আপনাকে দিতে আসছি । এটা আপনার কাছে থাকুক ।

কেন ?

কারন আমি আগামীকাল এই কবিতা সংক্রান্ত সমস্ত স্মৃতি ফিল্টার আউট করতে যাচ্ছি ।

ঠিকাছে রেখে যান ।

কস্তুরি ডায়রি রেখে, একটু ধীর গতিতে চলে গেল ।

আমি ডায়রি হাতে নিলাম । সিগারেট খাওয়ার পরিবেশ সাজাতে রোবট নিনো কে আদেশ দিলাম ।

তিন ।

আমার বসবাসের লেভেল টপে অর্ধ বৃত্তাকার স্থানে আমি ধূমপান করছি, ডায়রি পড়ছি । আমি এলেন কে ডাকলাম, এলেন ।

এলেন জবাব দিল, সম্মানিত রোদ্দুর আহমেদ আপনার জন্য কি সহযোগিতা করতে পারি ।

আমি এলেন কে বন্ধু মুডে অন হতে বললাম । বললাম, এলেন বাকি এক ঘণ্টা তুমি বন্ধু মুডে থাকো ।

এলেন বন্ধু মুডে অন হয়ে ঠা ঠা করে বলা শুরু করলো, ওরে হালারপো, কাবোদাচো, তুই বিড়ি খা , মদ খা, আর চুল ফালা বইসা বইসা । কস্তুরি বেগম যে তোমার প্রেমিকা ছিল এটা তুমি বুঝতে পারো নাই এহনো । আমি প্রেমিকার জন্য টুইটার কিনা ফালাইছিলাম , আর তুই হালার কোন কালে গোটা চারি কবিতা লেখছো, তাও আবার মনে করতে পারোসনা ? এমন আহমম্ক, – দাই ঘোচের কাওরে তো দেখি নাই আজ পর্যন্ত ।

আমি এলেন কে থামিয়ে দিয়ে বললাম, বাবা এলেন তুমি এখন রেগুলার মুডে চলে যাও ।

ইয়েস সম্মানিত রোদ্দুর আহমেদ আপনার জন্য কি করতে পারি ।

আমার ব্রেনে অস্তপ্রচার সংক্রান্ত তথ্য আমাকে জানাও তো ।

৩০২১ সালে আপনি ড. বেনজামিন কে দিয়ে জটিল কোন অপারেশন করিয়েছিলন, ২০ দিনের ছুটি নিয়েছিলেন আপনি ।

কস্তুরির কি খবর ।

কস্তুরি বেগম আগামীকাল ড. বেনজামিনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছেন ।

তুমি ড. বেনজামিন কে বার্তা পাঠাও, কস্তুরি বেগমের অপারেশন বাতিল করে আমার অপারেশন ফিক্স করো । আমিার স্মৃতি পুনোরদ্ধার জনিত অপারেশন করতে হবে ।

এলেন বলল, আমি কি বন্ধু মুডে একটি যেতে পারি ?

ওকে পাঁচ মিনিট ।

এলেন ( বন্ধু মুডে ) : কিরে হালার পুত, হঠাৎ মনে হয় রোমান্টিক হয়ে গেলি ? নাকি লুইচ হয়ে গেলি ?

চার

ড. বেনজামিন প্রভাবশালী মুনিয়া রোদদুরের মাথার অস্ত্র প্রচার করছেন । কস্তুরি বেগম কোনমতেই তার অপারেশ করাতে পারলেন না, সে কিছুক্ষন চিৎকার করলেন, এটা আন ইথিক্যাল, ক্রাইম, একজনের অ্যাপয়েণ্টমেন্ট কেন ক্যানসেল হয়ে অন্যকারো হবে? কে সে ?

বেনজামিনের লোকজন জানালো, এটা টপ সিক্রেট , হাই প্রোফাইল। আপনি এক সপ্তাহ পরে যোগাযোগ করেন ।

পাঁচ

ব্রেন অপারেশনের পর আঠারো ঘণ্টা ঘুমাতে হয় । আঠারো ঘণ্টা ঘুমানোর পর আমার ঘুম ভাঙলো । পৃথিবী থেকে আমার মঙ্গল কামনায় অসংখ্য বার্তা পাঠানো হয়েছে, গুরুত্ব পূর্ণ বার্তা গুলা এলেন আমাকে পড়ে শোনালো । সবশেষে বলল, পৃথিবীর নীলগিরি পর্বতমালায় আপনার আপনার সময় কাটানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে, কস্তুরি বেগম কে এখনো কোন কিছু জানান হয় নাই ।

তাকে জানানোর কিছু নাই, ড. বেনজামিনের কাছে আসলে তাকে অজ্ঞান করে পৃথিবীতে নিয়ে যাওয়া হবে, আমার সাথেই যাবে একই মাহাকাশযানে ।

সম্মানিত রোদদ্দুর তার কনসেন্ট নেওয়াটা জরুরি ছিল ।

যা বোঝনা তা নিয়া কথা বইলো না ।

আমি কি এক মিনিটের জন্য বন্ধুমুডে যেতে পারি ?

কেন ?

খুব জরুরি ।

ওকে এক মিনিট ।

এলেন ( বন্ধু মুডে ) , কিরে -দিরভাই সায়েন্স ফিকশন লিখতে গিয়ে এটা কি লিখলি তুই ।।

( সমাপ্ত )
( আবার সমাপ্ত নাও হবার পারে )

লেখক : মাসুদ করিম ।