বায়োফ্লক নিয়ে পানির মতো সহজ সরল এবং পুর্নাঙ্গ সমীকরণ

মাসুদ করিম

লেখার কারন এবং উদ্দেশ্য টা বলে নেই। আমাদের এলাকা ভিত্তিক সংগঠন এসডিএ (সেল্ফ ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েসন ) থেকে সিদ্বান্ত নিলাম প্রথম প্রজেক্ট হিসেবে আমরা বায়োফ্লক বাস্তবায়ন করবো। কারণ প্রজেক্ট  হিসেবে বায়োফ্লক আমাদের সাধ্যের মধ্যে সহজ একটি প্রজেক্ট। আমাদের সংগঠনের যে সদস্য এ বিষয় নিয়ে অনলাইনে অভিজ্ঞতা নিচ্ছিল সে প্রথমে জানালো দশ হাজার লিটারে বায়োফ্লক এর একটি ট্যাংকে টোটাল খরচ পঞ্চাশ হাজার টাকা সর্ব সাকুল্যে। আমরা সবাই ওই রাতেই ইনবক্স গ্রূপে মতামত দিলাম আমরা বায়োফ্লক এর একটি দশ হাজার ট্যাংক দিয়ে শুরু করবো । পরবর্তীতে সেই সদস্যই জানালো দশ হাজার লিটারে খরচ বেড়ে ৭৫০০০/= টাকা হবে কারণ অন্যান্য খরচ ধরা হয়নি। আবার আলোচনা চলতে লাগলো কয়কেদিন। আলোচনার পর আমরা শেয়ার ছাড়লাম । ১%শেয়ার ৭৫০ টাকা। তথ্য বিভ্রাট কাটাতে আমিও তথ্য সংগ্রহ শুরু করলাম, ফেসবুক বিভিন্ন গরুপে যুক্ত হলাম, উদ্দেশ অতি অল্প সময়ে সঠিক তথ্য নিয়ে প্রজেক্ট এর জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহন। আমাদের আরেক ফেন্ড মাসুদ রানার ভিবিন্ন আর্টিকল শেয়ার করতে লাগলো আমি  ফেইসবুক গ্রূপে প্রশ্ন করতে লাগলাম। এদিকে আমাদের যে সদস্য বায়োফ্লক এর প্রস্তাব দিয়েছিল তাকে প্রজেক্ট ম্যানেজার মনোনিত করা হলো এবং সে কিছুদিন পর আবার জানালো, ৭৫০০০ টাকা দিয়ে দশ হাজার লিটার করার চেয়ে আরো টাকা বাড়িয়ে এক লক্ষ্য লিটারের ট্যাংক করে শুরু করা উচিৎ। তার কথার যুক্তি ছিল যে, কিছুদিন পর পর পৃথক পৃথক ট্যাংক করে দশটা করলে যে খরচ হবে তার প্রায় অর্ধেকে খরছে এক লক্ষ লিটার শুরু করলে খরচ কমে যাবে। পড়লাম ফ্যাচাদে। টু-দা পয়েন্ট কাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তরে সহজে পাচ্ছিলাম না। গত কয়েকদিন এ ভিবিন্ন আর্টিকল পরে ছোটাখাটো একটা গবেষনার মতো হয়েগেল। তথ্য পর্যালোচম করে বায়োফ্লক নিয়ে একটি সহজ সমীকরণ লেখার সিদ্বান্ত নিলাম। যাতে অল্প সময়ে সহজেই যেকেও বায়োফ্লক এর একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

বায়োফ্লক কি।
আপনার যারা অ্যাকুরিয়াম দেখেছেন, তারা এটাকে অ্যাকুরিয়াম এর সাথে তুলনা করতে পারেন, তাতে বোঝা সহজ হবে। বায়োফ্লক কে আমার কাছেও একটি বড় সর একটা অ্যাকুরিয়াম মনে হয়েছে। আমার এক বন্ধুর বাসায় কয়েক রকম সুন্দর সুন্দর বিদেশী মাছ রাখা কাচের অ্যাকুরিয়াম আছে। স্বচ্ছ টলটলে পানিতে মাছ গুলো সাতার কাটতে দেখে এক ধরনের শান্তি লাগে। সেই একুরিয়াম মাছের খাবার দিতে হয়, পানি মাঝে মাঝে পরিবর্তন করতে হয়, ছোট মটর দিয়ে ‍বুদবুদ দিতে হয় যাতে মাছ গুলো অক্সিজেন পায়। অ্যাকুরিয়ামে ঘরের ভিতর স্বচ্ছ কাচের বোয়াম কিংবা ঝারে মাছ রাখা হয় শুধুমাত্র দেখার জন্য,  আর বায়োফ্লক মুটামুটি বড় একটি অ্যাকুরিয়ামের মতো তৈরি করে মাছ চাষ করা হয় খেয়ে ফেলার জন্য। যারা অ্যাকুরিয়াম চেনেন না মুরগীর খোয়ার চেনেন, তারা বায়োফ্লক কে মাছের খোয়ার বলতে পারনে। মুরগী খোয়ারে রেখে পালতে বাশ,কাঠের ছোট্ট একটি ঘর লাগে, তেমনি মাছেকে গৃহপালিত করে পালতে ছোট্র একটি পুকুর লাগবে। সেই বিশেষ পুকুরটার মাধ্যমে মাছ চাষ করা টেকনোলজিই হলো বায়োফ্লক।

যারা বেশি শিক্ষিত তাদের জন্য-  বায়ো মানো জীবন, আর ফ্লক মানে লেগে থাকা অনুজীব। লেগে থাকা অনুজীব তৈরি করে মাছ চাষকরার কৌশল এর জন্য এর নাম দেয়া হয়েছে বায়োফ্লক।বায়োফ্লক এ ঘরের মতো ছোট পুকুর বানাতে হয় বলে আপনি এটাকে মাছের ঘর বলতে পারেন। 

বায়ো ফ্লক এর ধাপ
এই ঘরোয়া পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য পাচটি ধাপে এগুতো হবে। ১) মাছের ঘর বা ট্যাংক প্রস্তুতি, ২) ট্যাংকে মাছের উপযুক্ত পরিবেশ প্রস্তুতি, ৩) খাদ্য প্রস্তুতি, ৪) পোনা সংগ্রহ, ৫) নিয়োমিত তত্বাবধান এবং সমস্যা সমাধান। একটি ১০,০০০ (দশ হাজার লিটার) এর ট্যাংক এ মাছ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যায় নিম্নে তুলে ধরা হলো।

১) ট্যাংক প্রস্তুতি
ট্যাংক আকার চারকোনা কিংবা গোল হতে পারে তবে গোল আকৃতি মাছের জন্য ভালো এবং উপকারী। চারকোনা ট্যাংকে জায়গার অপচয় কম হয়, কিন্তু মাছ এর মুভমেন্ট গোল ট্যাংক এ ভালো হয় এবং চারকোনা ট্যাংকের কর্নারে জমে থাকার মতো গোল ট্যাংকে বিভিন্ন উপাদান জমে থাকার সম্ভাবনা থাকে না। ট্যাংকের উপাদান সিমেন্টর এর চেয়ে তারপলিন ভালো, কোরিয়ান তারপলিন। সিমেন্টর ট্যাংকে মাছের লেজ পচা রোগের সম্ভাবনা বেশি থাকে। ট্যাংকের মাঝখান বরাবর পানি একটি নিষ্কাশন পাইপ বসাতে হবে। যাতে করে সময় সময় পানি বাইরে বের করে দেয়া যায়। ট্যাংকের পরিধি থেকে সেন্টারের দিকে একটু ঢালু রাখতে হবে।

টেবিল ০১ঃ বায়োফ্লকে একটি ট্যাংক এর খরচ ২৯,৫৫০ টাকা।

ক্রমবিষয়পরিমানব্যয় (টাকা)মন্তব্য
০১তারপলিন১৬০০০কোরিয়ান
০২জুতার সোল২৬০০তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন এর জন্য
০৩রড১০০ কেজি৬০০০মজুরি সহ
০৪ইট৩৪০ টি১৫০০ টাকাখরচা কিছুটা বাড়তে পারে বা কমতে পারে।
০৫সিমেন্ট১ বস্তা৪৫০খরচা কিছুটা বাড়তে পারে বা কমতে পারে।
০৬বালি৫০০৫০০খরচা কিছুটা বাড়তে পারে বা কমতে পারে।
০৭পাইপ/ এয়ার স্টোন/ রশিপ্রয়োজন মত৫০০খরচা কিছুটা বাড়তে পারে বা কমতে পারে।
০৮মুজুরি২০০০টোটাল সেটাপ
টেবিল ০১ঃ বায়োফ্লকে একটি ট্যাংক এর খরচ।

ট্যাংকের পানির হিসাব। গোলাকার ট্যাংক হলে যেভাবে বের করবেন ট্যাংকের পরিমাপ। সূত্র: V=π〖hr〗^2 । এখানে V হল পরিমাপ মানে ভল্যুম, π হল ৩.১৪, h হল ট্যাংকের উচ্চতা আর r হল ট্যাংকের ব্যাসার্ধ। যদি ব্যাসার্ধ ২ মিটার হয়, উচ্চতা ৪ মিটার হয়, তাহলে V হবে ৫০.২৪ m3 (কিউবিক মিটার)। প্রতি কিউবিক মিটারে পানি ধরবে ১,০০০ লিটার। তার মানে এই পরিমাপের একটি ট্যাংকে পানি ধরবে প্রায় ৫০ হাজার লিটার। আর আয়তাকৃতি বা বর্গাকৃতি ট্যাংক হলে মাপ হবে; দৈর্ঘ্য x প্রশ্থ x উচ্চতা। এই হিসাব ফুটে করতে চাইলে মনে রাখতে হবে প্রতি ঘনফুট পানির ধরবে ২৮.৩২ লিটার।

২) মাছের পরিবেশ প্রস্তুতি
ক) ১ম দিন পানির ট্যাংক পটাশিয়াম পার্মাঙ্গানেট দিয়ে বা হবে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। যাতে খারাপ ব্যাকটেরিয়া দূর হয়ে যায়। পরিষ্কার করার পর ১ দিন শুকিয়ে নিতে হবে।

খ ) ২য় দিন অর্ধেক পরিমান পানি দিয়ে ট্যাংক পূর্ণ করতে হবে। এরপর এয়ারেশন ছাড়তে হবে। এখানে উল্লেখ্য, এয়ারেশন দিতে হবে পানির ৩ স্তরে। উপরের স্তরে, মাঝের স্তরে এবং শেষ স্তরে।

গ ) ২ দিন পর মানে ৪র্থ দিন দেখতে হবে টিডিএস এবং পিএইচ। ট্যাংকের পানির টিডিএস থাকতে হবে ৬০০-৮০০, আর পিএইচ থাকতে হবে ৭ এর উপরে। সাধারণত পানির টিডিএস থাকে ৫০০ এর মধ্যে আর পিএইচ থাকে ৬ এর নিচে।

ঘ) ৪র্থ দিন দুপুরে যদি পানি টিডিএস ১৮০০-২১০০ এর মধ্যে না হয়, তবে উপরে উল্লেখিত মাত্রার লবন প্রয়োগ করতে হবে। তারপরও যদি টিডিএস কাঙ্খিত পর্যায়ে না আসে তবে পরিমান মত আরো লবন প্রয়োগ করে কাঙ্খিত সীমার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। যদি কোনভাবে টিডিএস ১৮০০-২১০০ এর উপরে চলে যায় তবে নরমাল পানি মিশায়ে মাত্রা ঠিক করতে হবে।

ঙ) ৪র্থ দিন সন্ধ্যায় পিএইচ যদি ৬ এর নিচে থাকে তবে উপরে উল্লেখিত মাত্রার চুন মিশাতে হবে যেন পিএইচ মাত্রা ৭-৮.৫ এর মধ্যে থাকে। পিএইচ এর কাঙ্খিত মাত্রা শুধুমাত্র চুন প্রয়োগ করেই আনতে হবে। যদি পিএইচ ৮.৫ এর উপরে চলে যায়, তবে ফিটকারী অথবা তেঁতুলের রস দিয়ে কাঙ্খিত সীমার মধ্যে আনতে হবে।

টেবিল ০২ঃ ট্যাংক এর পরিবেশ সংক্রান্ত ব্যায় ২৮,২৫০ টাকা।

ক্রমবিষয়পরিমানব্যয় (টাকা)মন্তব্য
০১মটর৬০০০পানি দেবার জন্য
০২অ্যায়েরটর৭০০০অক্সিজেন দেবার জন্য
০৫চুন১ কেজি৫০ টাকাউন্নত পিএইচ এর জন্য
০৬লবন১২ কেজি১৫০ টাকামিনারেল এর জন্য
০৭তেতুল১/২ কেজি৫০ টাকাকম/বেশি। অ্যামনিয়া বেড়ে গেলে দিতে হবে।
০৮সৌর বিদুৎ১৫০০০বিদ্যুত
টেবিল ০২ঃ ট্যাংক এর পরিবেশ সংক্রান্ত ব্যায়।

৩) মাছের খাদ্য প্রস্তুতি
প্রথমে মোলাসেস বা গুড় মিশিয়ে দিতে হবে। অল্পক্ষণ পর মিশাতে হবে প্রোবায়োটিক। এগুলো মিশাতে হবে সন্ধ্যের পর। এভাবে ৭ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত হাই এয়ারেশনসহ ফেলে রাখতে হবে।

টেবিল ০৩ঃ খাদ্য সংক্রান্ত খরচ ৩১,৭১০ টাকা।

ক্রমবিষয়পরিমানব্যয় (টাকা)মন্তব্য
১)ফিড৩০০০ কেজি৩০০০০কম/বেশি
২)প্রোবায়োটিক৫০০ গ্রাম১৫০০ টাকাকম/বেশি
৩)মোলাসেস৬ কেজি২১০ টাকাকম/বেশি
টেবিল ০৩ঃ খাদ্য সংক্রান্ত খরচ।

ফ্লক পরীক্ষা করা:
৭ বা ১৫ দিন পর ট্যাংকে সাদা বা সাদাটে রংয়ের অনেকগুরো পদার্থ জমা হতে থাকে। এই পদার্থগুলো পৃথক পৃথক থাকে এবং পানি থাকবে পরিষ্কার। ট্যাংক থেকে এই সাদা পদার্থসহ কিছু পানি নিয়ে একটা কাপড় দিয়ে ছেকে পানি ফেলে দিতে হবে এবং কাপড়ের উপর জমা হওয়া পদার্থগুলো সংগ্রহ করে নিতে হবে। এখন একটা তেলাপিয়াকে এনে একটা বালতির পানির মধ্যে রেখে দিন ১ দিন। এরপর সংগৃহীত পদার্থগুলো (ফ্লক) ঐ বালতির মধ্যে ছেড়ে দিতে হবে। যদি তেলাফিয়া ফ্লকগুলো খেয়ে ফেলে তবে বুঝতে হবে ফ্লক তৈরী ১০০ ভাগ সফল। যদি আধাআধি খায় তবে বুঝতে হবে ফ্লক এখনো পুরো হয়নি। যদি না খায় তবে বুঝতে হবে পদার্থগুলো ফ্লক নয় অন্য কিছু। এরপরও যদি ফ্লক না আসে তবে প্রোবায়োটিক ও মোলাসেস আবারো মিশাতে হবে।

৪) মাছের পোনা সংগ্রহ
মাছের হ্যাচারি, কাছের মৎস খামার থেকে পোনা সংগ্রহ করতে পারনে। খেয়াল রখতে হবে পোনা পরিবহন এর সময় মাছ যাতে মরে না যায়।

টেবিলঃ৪ মাছের পোনা ক্রয় ব্যায় ৪,৮০০ টাকা

ক্রমবিষয়পরিমানব্যয় (টাকা)মন্তব্য
১)মাছের পোনা ৮০০০টি৪৮০০ টাকাকম/বেশি
টেবিল ০৪: মাছের পোনা বাবদ খরচ।

৫) নিয়োমিত তত্বাবধান এবং সমস্যা সমাধান।

টেবিলঃবিভিন্ন পরীক্ষা উপকরণ ক্রয় ১০,৭০০ টাকা

ক্রমবিষয়পরিমানব্যয় (টাকা)মন্তব্য
পিএইচ মিটার১৫০০৭.৭ আদর্শ
ডিও মিটার৫০০০৫-৮ পিপিএম
টিডিএস মিটার১০০০৮০০-১২০০ পি পি এম
অ্যামেনিয়া টেস্ট কিট২০০০০.৫পিপিএম
থার্মোমিটার৫০২০-৩০ সেন্টিগ্রেড
ইমহোফ কোন৫০প্রতি লিটার ৩০-৪০ সিসি ফ্লক
১০০ লিটার ড্রাম৭০০ফ্লক তৈরি করার জন্য
টেবিল ৫: বিভিন্ন টেস্ট এর জন্য উপকরন।

টেবিল ১ থেকে টেবিল ৫ এর টোটাল ব্যায় ১,০৫০১০ টাকা (এক লক্ষ্য পাচ হাজার দশ টাকা )। খরচ অবশ্যই কম/বেশি হতে পারে।

বিভিন্ন ভাবে এখরচ কমে যেতে পারে, ১) ডিও মিটার না কিনে, ২) সার্বক্ষনিক বিদ্যুত এর ব্যবস্থা করে। ৩) মাছের পোনা কমিয়ে।

কতিপয় বিষয়ের পরিচিতি

প্রোবায়োটিক কি : বায়োফ্লকের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এটি। যাকে ভাল ব্যাকটেরিয়া বলা হয়। যেমন ল্যাকটোব্যাসেলিয়াস নাম ব্যাকটেরিয়া। এটা দিয়ে দুধ থেকে দই তৈরী হয়। এ ছাড়া আমাদের পাকস্থলীতে অনেক ভাল ব্যাকটেরিয়া থাকে যার সংখ্যা প্রায় ৪০০ হবে। যা আমাদের হজম কাজে সাহায্য করে। এই প্রোবায়োটিক মাছের উচ্ছিস্ট থেকে তৈরী অ্যামোনিয়া গ্যাস দূরীভূত করে। প্রোবায়োটিকের পিএইচ সাধারন: ৩.৫ থেকে ৪.৫ থাকা বাঞ্চনীয়।

মোলাসেস কি:মোলাসেস হল চিটাগুড় বা গুড়ও বলা যায়। আবার ঝোলাগুড়ও বলা হয়। অনেকে লালিও বলে। এটা হল কার্বনের উৎস। তাই বলে কয়লা নেয়া যাবে না। একান্ত মোনাসেস না পেলে গুড় ব্যবহার করা যাবে।

ডিও মিটার কি: এটা দিয়ে পানির ডিসল্ভ অক্সিজেন পরিমাপ করা হয়। পানিতে ৫-৮ মি.গ্রা/লিটার হারে দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকলে মাছ কাঙ্ক্ষিত হারে বৃদ্ধি পায়। পানিতে ২.০ মি.গ্রা/লিটারের কম অক্সিজেন থাকলে রুইজাতীয় মাছ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে না। অবশ্য মাছ ভেদে অক্সিজেনের মাত্রা পৃথক হতে পারে।

.র’ সল্ট কি: মানে খোলা লবন। যেটা অপরিশোধিত। সামদ্রিক লবনও বলা হয়। যেটাতে কোন আয়োডিন থাকে না। সমুদ্রের পানিতে বেশি খনিজ বা লবন থাকে । টিডিএস বাড়িয়ে আপনি সামুদ্রিক মাছ ও বায়োফ্লকে চাষ করতে পারেন।

পিএইচ মিটার কি: এটা দিয়ে পানির পিএইচ পরিমাপ করা হয়। মাছ চাষের পানিতে পিএইচ এর মাত্রা ৭-৮.৫ এর মধ্যে থাকা বাঞ্চনীয়। পিএইচ মাত্রা যদি ৪.৫ এর নিচে হয় এবং ১০ এর উপরে হয় তবে সব মাছ মারা পড়বে। পিএইচ যদি ৬.৫-৮.৫ এর নিচে বা উপরে হয় তবে এক্ষেত্রে মাছ যেকোনভাবে আক্রান্ত হবে।

টিডিএস মিটার কি: TDS এর পূর্ণরূপ Total Dissolved Solid. পানিতে সাধারণত দ্রবীভূত অবস্থায় ক্যালসিয়াম , ম্যাগনেসিয়াম , পটাসিয়াম ও সোডিয়ামসহ আরো কয়েকটি প্রাকৃতিক উপাদান থাকে যাকে টিডিএস (TDS) বলা হয় । এগুলো পরিমাপের যন্ত্রটিই হল টিডিএস মিটার। মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত টিডিএস হল ১৮০০-২০০০মিগ্রা/লিটার এর মধ্যে। ২০০০ হল স্ট্যান্ডার্ড।

অ্যামোনিয়া টেস্ট কিট কি: এটা একধরণের তরল পানীয়। এটা দিয়ে পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমান পরীক্ষা করা হয়। অ্যামোনিয়া ০.৬-২.০ মিলিগ্রাম/লিটার হলে মাছের জন্য তা বিষাক্ত হয়ে থাকে। অ্যামোনিয়া ঘনত্বের সর্বোচ্চ মাত্রা হলো ০.১মিলিগ্রাম/লিটার। অ্যামোনিয়ার পরিমাণ ০.২ মিলিগ্রাম/লিটার এর কম থাকা ভালো। যদিও ০.৪ মিলিগ্রাম/লিটার গ্রহণযোগ্য। সাধারণত: ১০মিলি পানির সাথে ৮ ফোটা কিট যোগ করে পরীক্ষা করতে হয়।

ট্যাংক বাড়ালে, টেস্ট কিট এবং মোটর ছাড়া বাকি সব খরচ বাড়বে। আমরা ঢাকায় গুলশা মাছ কিনি ৭৫০ টাকা কেজি করে, ১০০০০ লিটারে ৩৫০ কেজি গুলশা উৎপাদন সম্ভব হলে প্রতি কেজি ৪০০ টাকা বিক্রি করতে পারলে টোটাল বিক্রয় মুল্য  ১,৪০,০০০ (এক লক্ষ্য চল্লিশ হাজার টাকা)। ঠিকমতো চাষ করলে আপনি প্রথম হারবেস্ট এর টাকা দিয়ে নতুন আরো একটি ট্যাংক বানাতে পারেন, এখেত্রে খরচ কমে যাবে কারন অনেক কিছুই আপনাকে কিনতে হবেনা।

বি: দ্র: এই লেখার কোন সংযোজন, বিয়েজন, বা সংশোধনী থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন।

লেখকঃ অ্যানিমেটর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *