মাফিয়া নীতি। গল্প। মোসাব্বের হোসেন মুয়ীদ

আজ টর্চার সেলে আলতাবকে তুলে এনেছি। আলতাবের সাথে আমার অনেক পুরোনো শত্রুতা। আলতাবকে চেয়ারে বসিয়েছি রেখেছি। একটি প্লাস দিয়ে আলতাবের নখ টেনে টেনে তুলছি। আলতাব চিল্লিয়ে বলছে-

-ভাই… আমার ভুল হইয়া গেছে!!! আপনি আমার বাপ লাগেন… আপনারে মাফ কইরা দেন বাপ…

-হা…হা…হা… ঐ ন#র পোলা! তুই কি ভাবছোস যে তরে আমি নখ তুইলাই ছাইড়া দিমু!!!!!! ঐ হাতুড়িটা দে!
.
আমার সহকারী রশিদ আমাকে হাতুড়ি দিল। আমি হাতুড়ি দিয়ে আলতাবের সবগুলো নখ ছেচে ফেললাম। আলতাব কাঁদতে কাঁদতে বলছে-
.
-ভাই… আমি বাপের জন্মে আপনার এলাকায় ফেন্সিডিল বেঁচমু না… ও ভাই… আমারে মাফ কইরা দেন!!!!!!
.
আমি এরপর রশিদের দিকে তাকালাম। রশিদ একটি চাপাতি বাড়িয়ে দিল। আমি আলতাবের কবজি দুটো কেটে ফেললাম। আলতাব অজ্ঞান হয়ে গেছে। আমি রশিদকে বললাম-
.
-রশিদ… ওরে পানি টানি খাওয়া… রক্ত থামা… আধা ঘন্টা পর আমি আসতেছি…তারপর ওর পাও কাটমু..এরপর একবারে জবো দিয়া মাইরা ফেলমু…
.
-আচ্ছা ভাই…
.
আমি টর্চার রুম থেকে বের হয়ে পরলাম। একটা বেনসন সিগারেট ধরিয়ে আমি টানছি।নাহ মাথায় অন্য একটা বুদ্ধি এসে গেল।আলতাবকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।ওর সাথে যা হয়েছে তা পুরো শহর ছড়ালে আমার প্রতি মানুষের ভয় বাড়বে আর আমার প্রতিদ্বন্দী তৈরি হবে না সহজে। আমি আলতাবের বউকে কল দিলাম।বললাম যে ১০ মিনিটের মধ্যে আমার বাড়িতে আসতে। স্বামীকে আটকিয়ে রেখেছি। বাঁচাতে চাইলে ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসতে। আলতাবের স্ত্রী এসে পরলো। টাকা নিয়ে আমার পায়ের নিচে লুটিয়ে পরলো এবং আমাকে বলছে-
.
-ভাই… আমি দশ লাখ আনছি… আমার স্বামীরে একদম সহি সালামত ফিরিয়া দেন…
.
-হের… আমি না ওর দুই হাতের কবজি কাইট্টা ফালাইছি… আরে চিল্লিয়া কাইন্দো না তো… শুনো … আমি মা জাতিগোর অনেক সম্মান করি… চাপাতি দিয়া কাটছি তো… কবজি দুইটাও সহি সালামত আছে… হাসপাতালে নিয়া গেলে জোড়া লাগতে পারে… খাড়াও আইতাছি…
.
আমি ভিতরে গিয়ে আলতাবকে আনলাম এবং পলিব্যাগে ওর দুই হাতের কবজি আলতাবের বউকে দিয়ে বললাম-
.
-এই নাও… কবজি দুইটা ধরো… আর ধরো ১ লাখ টেকা… আমার বিশ্বাস কবজি দুইটা জোড়া লাগবো… ভাগ্যিস আমার মত ভাল মানুষ ওরে ধরছিল… আমি এরশাদ সিকদার না… তাইলে তো ওরে মাগুর মাছের পুষ্কোনিতে ফালাইয়া দিতাম… জলদি যাও… ঐ রশিদ!! যাহ যাহ! আমার গাড়িতে কইরা ওগোর হাসপাতালে দিয়া আয়! আর ডাক্তারকে কইবি যে আমার ছোট ভাই আলতাব… হাত জোড়া না লাগলে ১০ লাখ টাকা আমারে দিতে হবো… আর জোড়া লাগলে আমারে ৩০ লাখ টেকা দিতে হবো!!! আরে আলতাবের বউ তুমি এমন কইরা চাইয়া আছো কেন!!! যাও রশিদের সাথে…
.
২০০৩
.
আমার চাঁদাবাজি, টেন্ডার, কন্ট্র্যাক কিলিং, মাদক ব্যবসা সব খুব ভাল চলছে। আলতাবের কবজি দুইটা জোড়া লাগে নাই। ইস এর জন্য আমার মনটা খারাপ থাকে।ডাক্তার আমাকে ১০ লাখ টাকাও দিয়ে গিয়েছিল।কিন্তু আমার জীবনে সেদিনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল আলতাবকে বাঁচিয়ে রাখা।ওর বুদ্ধিতে সব চালায় ওর বউ।আলতাবের বউয়ের নাম কোহিনুর। আলতাব ১০ পাস থাকলেও এই শিক্ষিত স্নাতক করা কোহিনুরকে বিয়ে করে। নাহ! শিক্ষিত মানুষ যদি হারামি পথে আসে পারাটা মুশকিল। কোহিনুর নতুন করে মাদক ব্যবসা শুরু করার আগে অসৎ আইন শৃংখলা বাহিনীর সাথে হাত মিলায়। আর আমি তো পুলিশের সাথে খারাপ ব্যবহার করতাম। মাঝে মাঝে দুই একটার হাত পাও ভাঙতাম। তাই বলা চলে যে প্রশাসন আমার হাতে নাই। যার হাতে প্রশাসন নাই সে চাইলেও মাফিয়া থাকতে পারে না.২০০২ সালের ইলেকসানে আমি যে দলের কমিশনার ছিলাম সেই দল এখন ক্ষমতায় নেই। রুলিং পার্টির রাজনীতি করতে হবে। সামনে কমিশনার ইলেকসনও। এবার স্বতন্ত্র নির্বাচন করবো এবং পার্টি পাল্টাবো।
.
আজ রশিদ আমার কাছে এসেছে। রশিদ আমাকে বলছে-
.
-ভাই…
.
-কি কইবি জলদি ক…
.
-কোহিনুর তো…
.
-ঐ মা# আবার কি করলো!?
.
-ভাই ও তো শহরে ডিসের ব্যবসা করবো…
.
-করুক গা!
.
-আরে ভাই… ডিস বুঝেন না!?… ডিস লাইনের ব্যবসা…
.
-বুঝছি তো…
.
-হুর আপনে না একটা বা#
.
-রশিদ! ইদানিং কিন্তু মুখ লাগাম হারাইতাছে তর…
.
-ভাই… বিভিন্ন জেলায় মানুষ যেমনে কইরা ডিসলাইনের জন্য হুমড়ি খাইয়া পরতাছে… বিল ১০০ টেকা কইরা… প্রতি এলাকায় ধরলাম ৫০ টা বাড়িতে ডিস লাইন নিবো… আর ধরলাম যে পুরো শহরে ৫ লাখ মানুষ ডিস নিবো… বুঝছেন ব্যাপারটা?
.
-তাঁর মানে মাসে ইনকাম ৫০ লাখ টাকা!!!!?
.
-জ্বি ভাই…
.
-কি কি করতে হবো এই ব্যবসা করতে হইলে?
.
-ভাই… ঢাকা থেইকা ইঞ্জিনিয়ার আর মেকার ঢাইকা প্লেটের মত একটা বড় এ্যান্টিনা লাগাবো… তাঁরপর কি জানি একটা বক্স খুটীতে দিতে হবো আর তার দিয়া বাসায় বাসায় সংযোগ… ভাই তারের ব্যবসা কিন্তু আমার…
.
-তা নে… কিন্তু শুরু করতে কত টেকা লাগবো?
.
-১ কোটি!…
.
-ব্যবসা করুম না! বাদ দে!
.
-আপনে না আসলেই একটা বা#… দুই মাসে চালান উঠবো… আপনে কেন করবেন না!?
.
-এই বৈধ ব্যবসা আমার ভাল লাগে না!!! হুন সবাই আমারে মুইদ ভাই কয়… আমার কোন কিছুতে যদি অবৈধ ট্যাগটা না থাকে আমার ভাল লাগে না!
.
-তাইলে মাইনষেরে কইন আপনি নিজেও আছিলেন অবৈধ সন্তান…
.
-ভাগ চো#না!
.
৬ মাস পর…
.
আমি এখন রুলিং পার্টির কমিশনার। টাকা দিয়ে রুলিং পার্টির জেলা কমিটিতে পদ নেওয়ার ধান্দা চলছে পদ এই পেলাম বলেই। আজ রশিদকে ডাক দিলাম। রশিদ এসেই বলছে-
.
-ভাই …
.
-কোহিনুরের ডিস ব্যবসা কেমন চলে?
.
-ভাই… এখন মাসেই ওরা এক কোটি কামাইতাছে… ওরা ৩ মাস খালি শহরের মানুষরে ডিসের অভ্যাস ধরাইছে… হুট কইরা বিল ২০০ কইরা দিছে…
.
-হ… আমার বাড়িতেও ডিস আছে…২০০ টেকা বিল দেই…শুন… এবার সময় আইছে ওগোর ব্যবসাটারে নিজের কইরা নেওনের… ওর হাত কাটা জামাইরে গুলি কইরা মাইরা ফালা… ওর অফিসে গিয়া ভাংচুর কইরা আমাগোর পোলাপান বসাইয়া দে… আর হ্যা… করমচারিগোর গায়ে হাত তুলবি না… ওগোর কাছ থেকে সব শিখতে হবো… আর পত্রিকা ম্যানেজ দে!
.
-ভাই… সরি… আপনে না আমিই একটা বা#… মাত্র দুই তিন লাখ টাকা ঢাইলা আপনে হইয়া যাইতাছেন ডিসের মালিক…
.
-হে হে হে…যাহ রশিদ… জলদি কর ভাই…
.
-আচ্ছা ভাই…
.
রশিদকে যে কাজ দিলাম তা মাত্র ৭ দিনে করে ফেললো।শহরে এখন আলতাবের খুনের সংবাদটা চর্চায়। আমি ইদানিং পার্টি অফিসে বসে থাকি বেশি। পুলিশ আমাকে ধরতে পারছে না ওখানে বেশি থাকি বলে। আর সারাদিন কাটাই জেলা রাজনীতির সভাপতিকে প্রটোকল দিয়ে। রুলিং পার্টির দলের কাউকে ধরে তো পুলিশ কালারে পরবে না!
.
১ মাস পর
.
হুট করে আজ রশিদ এলো। এসেই বলছে-
.
-ভাই… টিভি চালু করেন… আপনে তো সংবাদে আইছেন…
.
-কস কি!?
.
-জ্বি ভাই… আপনার ব্যবসা, খুন খারাবি থেইকা শুরু কইরা আলতাবের ডিস যে দখলে নিছেন সব টিভিতে কইতাছে!!!
.
-ওই শহরের ডিস কিছুদিন বন্ধ রাখ..আমার সাপ্লাই দেওয়া ডিসেই আমারে নিয়া নিউজ দেখবো সবাই!!!হায় হায়!..
.
-ভাই পরিস্থিতি অনেক বেশি বিগড়া গেছে! আমি আন্ডার গ্রাউন্ডে গেলাম…আপনে কি করবেন সেটা ভাবেন! আপনে না আসলেই একটা বা#…
.
রশিদ আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে গেছে।এদিকে কেন্দ্র থেকে আমাকে বহিষ্কার করে দিয়েছে।পুলিশি তল্লাসির ভয়ে আমিও আন্ডার গ্রাউন্ডে। ঢাকার মিডিয়াকে নিজের হাতে করেছে কোহিনুর। এই শালি তো আসলেই একটা চিজ। এদিকে পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে আমাকে ক্রশ ফায়ারের আদেশ দিয়েছে। ইন্ডিয়া পালিয়ে যাওয়াটা উত্তম হবে।
ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্যে বের হতেই পুলিশ আমাকে ধরে ফেললো। প্রথমে থানায় নিয়ে ডিম থেরাপি দিল। সারা রাত ঘুমাতে দিলো না। নামতা বলালো,আমি তো পড়ালেখা জানি না।নামতা বলতে পারি নাই বলে খুব মারলো,আমাকে মেয়ে সাজিয়ে নাচালো। আমার কোথায় কোথায় কোন ব্যবসা,কার সাথে উঠা বসা সব জিজ্ঞাসা করলো। ডিমের ভয়ে কিছুই বলা বাদ রাখিনি। যা জিজ্ঞাসা করেনি তাও সেঁধে সেঁধে বলে দিলাম। পরে যদি আবার ডিম থেরাপি দেয় এই ভয়ে। আসলেই পুলিশের মার… এইটা যে খেয়ছে সে বুঝেছে যে এইটা কি জিনিস। এদিকে জেলা রাজনীতির সভাপতি বাঁচার জন্য আমাকে জলদি ক্রশ ফায়ারে দিতে বললো। এক সপ্তাহ পরে ক্রস ফায়ারে দেওয়ার কথা ছিল সেটি আজই করে দিবে।

.
রাতের বেলা একটি ধান ক্ষেতে আমাকে নিয়ে এসেছে।আমাকে বলছে দৌড়াতে আমি ওসির পায়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলছি-
.
-স্যার… আপনে আমার আব্বা… আব্বা… আমি দৌড় দিলেই আমারে মাইরা ফালাবেন … আমি বুঝি… আব্বা… আপনারে আমি ২০ কোটি টাকা দিমু… যে টাকার কথা এখনো আপনারা ছাড়া কেউ জানে না… আমারে ছাইড়া দেন… আমি ইন্ডিয়া যাইয়া ভাল হইয়া যামু…
.
-২০ কোটি টাকার জন্য এই রিস্ক আমি নিতে রাজি… তুই হামলা করে পালিয়েছিস এইটা বলবো… তা টাকাটা কই?
.
-স্যার ১০ কোটি আছে ওমুক ব্যাংকে… বাকি দশ কোটি আপনে আমারে যে সময় বর্ডার পার করাইয়া দিবেন সেই সময় বলমু…
.
-নাহ… এখনি সব বল তা না হলে মর!…
.
-আইচ্ছা স্যার… এই যে আমার সীনা পাইত্তা দিলাম গুলি করেন… কিন্তু স্যার ২০ কোটি টাকা কিন্তু সংখ্যায় অনেক… আপনারা ৫ জন আছেন… ৪ কোটি কইরা পাবেন কিন্তু…
.
-আচ্ছা যা রাজি…
.
১৫ দিন পর…

ইন্ডিয়ায় আছি আমি। পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে বাংলাদেশে ফিরার চেস্টা করবো। রশিদ আমাকে ৫ কোটি টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে। ভাবছি যে এখান থেকে মালেশিয়া বা দুবাই চলে যাব। এদিকে বেসরকারি টিভি চ্যানেল আসাতে খবরের ভয়ে দেশে খুন কমে গিয়েছে। সন্ত্রাসী রাজনিতির অবসান ঘটেছে। আগে টিভি চ্যানেল ছিল না। তাই জেলার প্রত্রিকা গুলো হাতে রাখলেই সব ঠিক থাকতো, সব নিউজ ছড়াতো না। মানুষের মনে ভয় থাকলে তারা থানা পুলিশেও বলতো না। এখন সব পালটে গিয়েছে।
আমি মালেশিয়া চলে গিয়ে ঐ দেশে কাজ করে খেতে লাগলাম আর ব্যবসাতেও ঢুকেছি। বাংলাদেশ আমি আসব জলদি। এই দেশে থেকে অনেক নতুন কিছু শিখছি আমি… সব অভিজ্ঞতা কাজে দিবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *