সেই ঘড়িটা ।

নাহিদ মুসাররাত

ছোটবেলায় মাগরিবের আজান দেওয়ার সাথে সাথেই আমরা নামাজ পড়ে, পড়তে বসতাম । ভাইয়া, তোমার মনে আছে? তুমি ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পাওয়ার পর আব্বা তোমাকে পুরস্কার হিসেবে একটা ঘড়ি কিনে দিয়েছিলেন। তখন আমি ক্লাস টুতে কেবল উঠেছি মাত্র আর আমার কোন নিজের ঘড়ি ছিল না । ঘড়িতে সময় কিভাবে দেখতে হয় তখন তাও জানতাম না।ঐ দিন সন্ধ্যার পর যখন আমরা পড়তে বসেছিলাম,তুমি নতুন ঘড়িটা পেয়ে হাতে পরেছিলে! হঠাৎ তুমি আমাকে বললে, “তুই পরবি ঘড়িটা ? নে তুই কিছুক্ষণ ঘড়িটা পরে থাক।”একথা বলেই, সাথে সাথে তোমার হাত থেকে ঘড়িটা খুলে আমাকে পরিয়ে দিলে । আমি খুব খুশি মনে ঘড়িটা পরে বসে থাকলাম। বারবার তাকিয়ে থেকে ঘড়িটা দেখলাম, আর তোমার কাছ থেকে জেনে নিলাম কিভাবে ঘড়িতে সময় দেখতে হয় । ঘড়িটা তুমি আমাকে রাত্রে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত পরতে দিয়েছিলে!

তুই পরবি ঘড়িটা ?

নে তুই কিছুক্ষণ ঘড়িটা পরে থাক।

তখন আমার বোঝার এতটা বয়স হয়নি, কেন ঐদিন তুমি ঘড়িটা আমাকে পরতে দিয়েছিলে ?! বড় হয়ে পরে আস্তে আস্তে বুঝেছিলাম, তোমার নিজের অর্জন করা আনন্দটুকু তুমি আমার সাথে ভাগাভাগি করে নিয়েছিলে। এর কিছুদিন পর আমার নিজের ঘড়ি হইয়েছি্ল আর তারপর সারা জীবনে কত রকম ঘড়ি পরেছি কিন্তু ওই সেই ছোট্ট বেলায় তোমার সেই ঘড়িটা কিছুক্ষণ পরে থাকার আনন্দ আর কোন ঘড়িতে খুঁজে পাইনি । তোমার দেওয়া সেই ভালোবাসাটুকু এখনো অটুট এবং সজীব হয়ে বেঁচে আছে আমার হৃদয়ে ।ছোটবেলা থেকে তুমি যা বলতে তাই মনে হতো সঠিক , বিশেষ করে পড়াশোনার ক্ষেত্রে , অংকের নিয়ম যদি তুমি একভাবে করাতে আর স্কুলের স্যার অন্যভাবে শেখাতো আমি চোখ বন্ধ করে তোমারটাই অনুসরণ করতাম । সব সময় ছেলেবেলার কত ছোট ছোট মধুর স্মৃতি যে মনের মাঝে ঘুরপাক খায় তা বলে শেষ করা যাবেনা । কত বছর হয়ে গেল আমরা কত দূরে দূরে থাকি, দেখা হয়না, ব্যস্ততার জন্য কথাও হয়না সব সময় কিন্তু সেই স্মৃতিগুলো মনের মাঝে সযত্নে লালিত হচ্ছে প্রতিদিন , সব সময় আমার সাথেই আছে, স্মৃতি যেন কথা বলে !

জীবনে সাফল্য বলতে কিছুই নেই আমার কিন্তু সামান্য একটু সফলতা অর্জন করে যদি থাকি তার পিছনে বিশাল অবদান ছিল তোমার এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আর বিফলতার সম্পূর্ণ দায়ভার আমার নিজের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *