মামুনুর রশীদ এক বট বৃক্ষের নাম ।

আমি তখন টাঙ্গাইলের রক্কু পরিষোদ এর কর্মী । সাম্য ভাই, বিভুতি দা, মহসিন ভাই, মনির ভাই , পল্টন দা, শাহীণ ভাই, রাজিব, অজয় সহ অনেকের সাথে তখন নাটক নিয়ে কাজ করি । মামুনুর রশীদ একসময় আমাদের নাটকের কর্মশালা করিয়েছিলেন। সেই দিনগুলো ছিল রোমাঞ্চকর । মামুনর রশীদ যে কত বিশাল ব্যক্তিত্য এবং জ্ঞানের আধার তার কাছে যারা গিয়েছে শুধু তারাই জানে ।

একাবার রককু স্মৃতি পরিষোদের পক্ষ থেকে আজাদ আবুল কালাম কে পুরষ্কৃত করা হয়েছিল । আজাদ আবুল কালাম যখন মঞ্চে কথা বলছিলেন তখন আমি দর্শকদের মাঝে ইভেন্টের প্রকাশনা বিতরণ করছিলাম । মামুনুর রশিদ তখন আমাকে বললেন, মাসুদ ! এসব রেখে বসে কথা শোন । আমি আজ্ঞাবহের মতো বসে পরলাম আর দেখতে লাগলাম, আজাদ আবুল কালাম এর মতো আরো অনেক বড় বড় শিল্পীদের যিনি গুরু তিনি কি মনযোগ দিয়ে তার শিষ্যর কথা শুনছেন। বস্তুত তার জ্ঞান স্পৃহা, প্রজ্ঞা এবং অভিজ্ঞতার খুব সমান্যই জনসম্মুখে উন্মচিত । বর্তমানে বাংলাদেশে মামুনুর রশিদ ছাড়া আর কোন বটবৃক্ষ জীবিত নাই যার ছায়াতলে নাট্যকর্মীর আশ্রয় পেতে পারে।

মামুনুর রশীদ শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধাই নন , তিনি তার আয়ত্বের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন এবং প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন । শ্রেণীসংগ্রাম তার নাটকের এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু। তিনি টিভির জন্যেও অসংখ্য নাটক লিখেছেন এবং অভিনয় করেছেন। বিভিন্ন সামাজিক ইস্যূ নিয়ে, শ্রেণীসংগ্রাম, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা অধিকার আদায়ের নানা আন্দোলন নিয়ে নাটক রচনা ও পরিবেশনা করে বাংলাদেশের নাট্য জগতে আলাদা স্থান করে নিয়েছেন। নাট্যকলায়  বিশেষ অবদানের জন্য ২০১২ সালে তিনি একুশে পদকে ভুষিত হন। ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেলেও স্বৈরশাসনের প্রতিবাদ স্বরূপ তিনি পুরস্কারটি প্রত্যাখ্যান করেন।

তাই মামুনুর রশীদ যে কোন বিষয়ে মতামত কে অতন্ত্য গুরত্বর সাথে বিবেচনা করে সম্মানের সাথে দ্বিমত পোষন করা যেতে পারে । তার অসম্মান হয় এমন সংবাদ পরিবেশন করা আমার মতে অপরাধের সামিল । গুনির কদরে জাতী হিসেবে আমরা বড়াবরি অনেক পিছিয়ে । পাশের দেশেই টেন্ডুলকার নিয়ে স্টেডিয়াম হয়, সন্জয় দত্তকে নিয়ে সিনেমা হয় কিংবা আরো অনেক জীবন্ত ব্যক্তিত্য যেভাবে তরুন প্রজন্মের কাছে উন্মোচিত হয় , আমাদের দেশে তা হয় না । মামুনুর রশিদ মারা গেলে হয়তো একটা আলোচনা অনুষ্ঠান হবে বছরে বছরে স্মৃতি চারন করে করে একদিন মুছে যাবেন।

মামুনুর রশিদের মতো ব্যক্তিত্যকে সঠিক ভাবে তরুন প্রজন্মের মাঝে তুলে ধরার জন্য সরকার সহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা উচিৎ । পচা শামুকে যাতে আমাদের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের পা না কাটে সে দিকে অতন্ত্য গুরত্বের সাথে খেয়াল রাখার জন্য মিডিয়া কর্মী, সাংবাদিক এবং সাংঘাতিকদের নিকট বিশেষ অনুরোধ রইল ।


লেখক : মাসুদ করিম

৯ thoughts on “মামুনুর রশীদ এক বট বৃক্ষের নাম ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *