আমাদের একজন মামুনুর রশীদ আছেন।

আমি গর্ব করেই উচ্চারণ করি, আমি গর্ব ভরে বিশ্বাসও করি– আমাদের একজন মামুনুর রশীদ আছেন। যিনি এখনও বিক্রি হন নাই, হাজার কোটি কেন, একটাকাও দেশের বাইরে পাচার করেননি। তাঁর চিকিৎসার টাকা নাট্যকর্মীদের চাঁদা তুলে এখনও জোগাড় করতে হয়! একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও, সব কিছু নিয়ে রগরগে ব্যবসা করবার এই ঘোর অন্ধকার নিদানকালে, এখনও তিনি শ্রেণী সংগ্রামের কথা বলেন, স্বপ্ন দেখেন শোসিত মানুষের দিনবদলের আর গত পঞ্চাশ বছর ধরে দুই বাংলার মানুষকে সেই স্বপ্নটা তিনি সফল ভাবে দেখাচ্ছেনও।

তাঁর বক্তব্যটা ছিল কুরুচি, কুশিক্ষাজাত অপসংস্কৃতির উত্থান জনিত, তাঁর বক্তব্যটা ছিল এই উত্থান কিভাবে রোধ করা যায় তা নিয়ে। এটা যে একটা রাজনৈতিক সমস্যা, সেই সাথে সাংস্কৃতিক সমস্যাও— তা নিয়েও। সমস্যাটা যে প্রকট আর বিগত ১৪ বছর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকবার পরও যে সমস্যাটার সমাধান নিয়ে কোন কাজই করা হয়নি , তা উপলব্দ হয় গত কয়েকদিন তাঁর বক্তব্য নিয়ে সৃষ্ট অথবা কৃত্রিমভাবে তৈরী করা বিতর্ক আর সেই বিতর্কসঞ্জাত ফেসবুকীয় মন্তব্যগুলো দেখে।

আপনার হাতে ক্যামেরা বা মুঠোফোন থাকলে তা দিয়ে আপনি ভিডিও বানাতেই পারেন, সেই ভিডিও আপনি অনলাইনে ছেড়ে দিতেই পারেন। সেই অধিকারটুকু এই দেশের সংবিধান আপনাকে দিয়েছে। কিন্তু ঐ ভিডিওতে আপনি কি দেখাবেন সেটার দায় কিন্তু পুরোটাই আপনার। আপনার শিক্ষা, মেধা, মনন, রুচিবোধ এসকলই ওখানে পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত হয়।সুতীক্ষ্ণ হাতিয়ার দিয়ে আপনি মানব জাতিকে রক্ষাও করতে পারেন, আবার তাকে ধ্বংসও করতে পারেন।আপনি কি তৈরী করবেন তা যেমন আপনার দায় আপনার অধিকার; আর সেটা যদি আমি চরম সর্বনাশের মনে করি তখন,আমার দায় – আমার অধিকার তার সমালোচনা করা, তার প্রতিবাদ করা এবং আপনাকে প্রতিহত করা।

দেখতে দেখতেই চোখ তৈরী হয় আর শুনতে শুনতে কান। অধিকাংশ মানুষ এখন গল্প,কবিতা, উপন্যাসের বই প্রকাশ করে, যদিও সে নিজে অন্যের লেখা পড়ে না। পৃথিবীর মহান সব সিনেমাগুলো নাম না জেনেও, সেগুলো না দেখেও এখন সিনেমা বানানো যায়, নাটক বানানো যায়, বানানো যায় ইউটিউবিয় কন্টেন। নিজের চ্যানেল থাকলে এদেশে মানুষকে গান শোনানোর নামে অত্যাচার করা যায়!

সার্বিক বিবেচনায় মনে হয় সত্যিই আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে! আমাদের টাঙ্গাইল এর কবি তারপদ রায়ের ’আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে’ কবিতাটি নীচে দিলাম মোক্ষম বিবেচনায়।

“আমরা যে গাছটিকে কৃষ্ণচূড়া গাছ ভেবেছিলাম
যার উদ্দেশ্যে ধ্রূপদী বিন্যাসে কয়েক অনুচ্ছেদ প্রশস্তি লিখেছিলাম
গতকাল বলাই বাবু বললেন, ‘ঐটি বাঁদরলাঠি গাছ’।
অ্যালসেশিয়ান ভেবে যে সারমেয় শাবকটিকে
আমরা তিন মাস বক্লস পরিয়ে মাংস খাওয়ালাম
ক্রমশ তার খেঁকিভাব প্রকট হয়ে উঠছে।
আমরা টের পাইনি
আমাদের ঝরণা কলম কবে ডট্ পেন হয়ে গেছে
আমাদের বড়বাবু কবে হেড অ্যসিস্ট্যান্ট হয়ে গেছেন
আমাদের বাবা কবে বাপি হয়ে গেছেন।
আমরা বুঝতে পারিনি
আমাদের কবে সর্বনাশ হয়ে গেছে।”


লেখক : সাম্য রহমান । নাট্যজন । কোরনেশন ড্রামাটিক ক্লাব । টাঙ্গাইল ।

৬ thoughts on “আমাদের একজন মামুনুর রশীদ আছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *