মহেড়া জমিদার বাড়ি। ভ্রমণ। সাজেদুল ইসলাম

মহেড়া জমিদার বাড়ি। এটি টাঙ্গাইলের মহেড়ায় অবস্থিত। অসাধারণ, সুন্দর,গোছানো ও মনোরম একটি পরিবেশ।পুরাতন জমিদার বাড়ি হলেও বর্তমাণে এটি ঘষামাজা ও রঙ করে বেশ আধুনিকায়ন ভাবে গড়া হয়েছে। বর্তমাণে এটি পুলিশ ট্রেণিং সেন্টার নামে পরিচিত। এখানে রয়েছে পার্ক, বিভিন্ন ধরণের পুকুর, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, ছোট চিড়িয়াখানা, রেস্টুরেন্ট, পিকনিক স্পট ও ফুলের
বাগান সহ অনেক কিছু।

এই জায়গার সম্পর্কে সংক্ষেপেকিছু ইতিহাস ও বিস্তারিত:

১৮৯০ সালের আগে স্পেনের করডোভা নগরীর আদলে এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা এই জমিদার বাড়িতে হামলা করে এবং জমিদার বাড়ির কূলবধূ সহ ৫ জন গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। পরে তারা লৌহজং নদীর নৌপথ দিয়ে এদেশ থেকে চলে যায়। তখন এখানেই মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল। পরে দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালে এই বাড়িটি পুলিশ ট্রেণিং স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং পরে পুলিশ ট্রেণিং সেন্টার নামে পরিচিত হয়। এই বাড়িটিতে রয়েছে ৪টি বিশেষ স্থাপত্য।

) চৌধুরী লজ : জমিদার বাড়িতে ঢুকেই মূল গেট দিয়ে দেখা যায় চৌধুরী লজ। এটির গোলাপি রঙের
ভবনটির পিলার গুলো রোমান স্থাপত্য শৈলীতে নির্মাণ করা হয়েছে। এ ভবনের ভেতরে আছে ঢেউ খেলানো ছাদ। দোতালা বিশিষ্ট এ ভবনের সামনে রয়েছে সুন্দর বাগান ও সবুজ মাঠ।
খ) আনন্দ লজ: এই জমিদার বাড়ির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভবন হলো আনন্দ লজ।এ ভবনটিতে রয়েছে ৩ তলা বিশিষ্ট আকর্ষণীয় বারান্দা যা ভবনকে আরো দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে। এছাড়াও এ ভবনের সামনে রয়েছে বাঘ, হরিণ ও বিভিন্ন পশু পাখির ভাস্কর্য ও ১টি চমৎকার বাগান।
) মহারাজ লজ: বাইজেনটাইন স্থাপত্য শৈলীতে মহারাজ লজ ভবনের সামনে ৬টি কলাম আছে। গোলাপি রঙের মহারাজ লজের সামনের সিঁড়ির বাকানো রেলিংটি ও ঝুলন্ত বারান্দা ভবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। ভবনটিতে মোট ১২টি রুম আছে। এই ভবনের সামনে একটি বাগান ও পেছনে ১টি টেনিস কোট রয়েছে। এছাড়াও এই ভবনটিতে বিভিন্ন ধরণের নাটক ও সিনেমার শুটিং স্পট

হিসেবে ব্যাবহ্রিত হয়।

) কালীচরণ লজ: এই ভবনটি অন্য ভবনগুলোর চেয়ে কিছুটা আলাদা। ইংরেজী “U” অক্ষরের এই ভবনটি ইংরেজ স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। অন্যান্য স্থাপত্য শৈলীর জন্য বিকেলবেলা ভবনের ভেতর থেকে সুন্দর আলোর ঝলকানি দেখা যায়। এ ভবনগুলো ছাড়াও রয়েছে নায়েব ভবন, কাচারি ভবন ও রানী মহল।

যেভাবে আসতে হবে :- 

ঢাকার মহাখালি বাস স্ট্যান্ড থেকে টাঙ্গাইলগামী নিরালা নামক বাসে টাঙ্গাইলের নটিপাড়া বাস স্ট্যান্ডে নামতে হবে। ওখান থেকে পুলিশ সেন্টার গেট। পুলিশ সেন্টার গেট থেকে সিএনজিতে করে যেতে হবে পুলিশ ট্রেণিং সেন্টার। আপনি যদি বাসের সুপারভাইজারকে আগে থেকে বলে রাখেন তাহলে ওরা আপনাকে পুলিশ সেন্টার গেটে নামিয়ে দিবে। ভাড়া নিবে ১৬০ টাকা। তার আগে কিছু কথা জেনে রাখা ভালো যারা ব্যাক্তিগত গাড়ি বা বাসে করে আসবেন তাদেরকে ঢাকা থেকে অনেকটা সকাল বেলায় রওনা দিতে হবে। কারণ ঢাকা-টাঙ্গাইল হাইওয়ে রোডে যানজটের সমস্যা থেকে থাকে অনেক। ২ ঘন্টার পথ সময় লাগে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। আর কেউ যদি ট্রেণে আসতে চান আসতে পারবেন। সেক্ষেত্রে টাঙ্গাইল স্টেশনে নেমে চলে যেতে হবে বাস রোড। ওখান থেকে জয়দেবপুরগামী যেকনো লোকাল বাসে চলে যেতে হবে নটিপাড়া।
ভাড়া নিবে ২০ থেকে ২৫/=। নটিপাড়া থেকে পুলিশ সেন্টার গেট। পুলিশ সেন্টার গেট থেকে  এনজিতে করে চলে যেতে হবে পুলিশ ট্রেণিং সেন্টার। ভাড়া নিবে ১৫/= জনপ্রতি। ওখানে নেমে ৮০/= দিয়ে টিকেট কেটে এই জায়গায় প্রবেশ করতে পারবেন। এছাড়াও টাঙ্গাইলে এর পাশাপাশি আরো বেশ কিছু দেখার মতো জায়গা আছে। পুরো ১দিন সময় করে সেগুলাও ঘুরে দেখা যাবে। জায়গাগুলা হলো ২০১ গম্বুজ মসজিদ, আদম কাশ্মীর মাজার, মধুপুর জাতীয় উদ্যান, আতিয়া মসজিদ, ধনবাড়ি নবাব মঞ্জিল, করটিয়া জমিদার বাড়ি, পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি, এলেঙ্গা রিসোর্ট, যমুনা রিসোর্ট ও যমুনা নদী। যমুনা নদীতে ঘুরার সবচেয়ে ভালো সময় হলো বিকেল বেলা। আর বিকেলবেলা শেষে সেতু হয়ে উঠে আলোকিত যা এক কথায় অসাধারণ। যারা ট্রেণে টাঙ্গাইল আসবেন তাদের সুবিধার্তে সকালে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল ও বিকেল থেকে সন্ধ্যার টাঙ্গাইল থেকে ঢাকার ট্রেণের সময়সূচীটা উল্লেখ করে দিলাম। ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলে সকালে ৪টি ট্রেণ আছে। 
১) রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস,* কমলাপুর থেকে ছাড়ার সময় ০৬:০০,* বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ছাড়ারসময় ০৬:৩০,* টাঙ্গাইল পৌছানোর সময় ০৮:০০।
২) খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস,* কমলাপুর থেকে ছাড়ার সময় ৬:২০,* বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ছাড়ার সময় ০৬:৫০, * টাঙ্গাইল পৌছানোর সময় ০৮:৪১।
৩) চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস, * কমলাপুর থেকে ছাড়ে ০৮:০০,* বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ছাড়ে ০৮:৩০, * টাঙ্গাইল পৌছানোর সময় ১০:২২।
৪) পঞ্চগড় গামী একতা এক্সপ্রেস। * কমলাপুর থেকে ছাড়ে ১০:০০,* বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ছাড়ে
১০:৩০,* টাঙ্গাইল পৌছানোর সময় ১২:০৫।টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা যাবার বিকেল থেকে সন্ধা পর্যন্ত ৪টি ট্রেণ চলে।
৫) খুলনা থেকে ছেড়ে আসা চিত্রা এক্সপ্রেস, * টাঙ্গাইল থেকে ছাড়ার সময় ১৫:২০,* ঢাকা পৌছানোর সময় ১৭:৪০।
৬) পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে আসা দ্রুতযান এক্সপ্রেস,* টাঙ্গাইল থেকে ছাড়ার সময় ১৬:০৮,* ঢাকা পৌছানোর সময় ১৮:১০।
৭) লালমণিরহাট থেকে ছেড়ে আসা লালমণি এক্সপ্রেস, * টাঙ্গাইল থেকে ছাড়ার সময় ১৮:৪৭,
* ঢাকা পৌছানোর সময় ২০:৫৫।
৮) রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা পদ্মা এক্সপ্রেস, * টাঙ্গাইল থেকে ছাড়ার সময় ১৯:৩০, * ঢাকা পৌছানোর সময় ২১:৪০। ভাড়া:- * শোভন চেয়ার (নরমাল) -১১৫/=* এসি- ২২০/=।
ট্রেণ গুলো যথাক্রমে যমুনা সেতু পূর্ব স্টেশন হতেঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় ১৪:৫৮,
১৫:৪৬, ১৮:২৪ ও ১৯:০৮।ভাড়া:- শোভন চেয়ার ১৩৫/=

লেখক : বিবিএ ৮ম ব্যাচ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *