একজন হিরোর প্রস্থানে

একজন হিরোর প্রস্থানে আমাদের জাতীয় শোক নেই অথচ একজন লুটেরা সম্রাজ্ঞীর জন্য আমাদের জাতীয় শোক আছে।গোলামীর দিন বুঝি আর গেল না! ঝাঁসির রানী থেকে ফুলনদেবী,বিনয়-বাদল-দীনেশ থেকে ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন-প্রতীলতা থেকে শুরু করে হাজারো বিপ্লবীর খুন হয়েছিলেন সে সাম্রাজ্যের ইশারায় সেই সাম্রাজ্যের রাণীর শোকে পুরো জাতি মাতোয়ারা যা বৃহত্তার্তেই আমাদের গোলামির কাসলত প্রকাশ করে।অথচ একজন জাতীয় বীর আকবর আলী নিয়ে তিনারা চুপ!

আসুন একজন আকবর আলীকে কিছুটা জেনে নেই,কিংবদন্তীর ইতিহাস ছোট থেকে শোনে বড় হবার সৌভাগ্য হয়েছিল সুতরাং যারা জানেন না তাদের বলি রাণীর জন্য না কেঁদে এবং গোলামি বাদ দিয়ে লেখাটা পড়ুন।….

হবিগঞ্জ জেলা শহরে ডিসি অফিসের পার্শ্বে নিমতলা প্রাঙ্গণ শহরের সবাই চেনেন। বিশাল ঘোড়ানিমগাছের পূর্বে একটা একতলা ভবন। এই ভবনটা সেকালে এসডিও সাহেবের অফিস ছিল। ভবনের বারান্দা আর একটা ঘরের মেঝের নিচে বিরাট বিরাট সিন্দুক। জেলা ট্রেজারি।

১৯৭১ সাল। সেসময় হবিগঞ্জ মহকুমার এসডিও একজন তরুণ অফিসার। আকবর আলি খান। সারাদেশের অসহযোগ আন্দোলনে তিনিও শরিক হলেন। হবিগঞ্জের থানায় থানায় ঘুরে প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিলেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হল। তখনও মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় নি। আকবর আলি খান নিজ হাতে লিখিত আদেশ তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র, খাদ্য ও অর্থ যোগান দেবার আদেশ প্রদান করলেন। থানা থেকে অস্ত্র নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাগণ তেলিয়াপাড়া গেলেন। তাঁর আদেশে মহকুমার খাদ্য গুদাম খোলা হল। ট্রেজারি খোলা হল। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য তহবিল তৈরি করতে ব্যাংকের ভল্ট থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা উঠিয়ে ট্রাকে করে আগরতলায় পৌছে দেন।

এপ্রিলের শুরুতে তিনি আগরতলায় চলে যান। সেখানে সহযোগীদের নিয়ে আকবর আলি খান একটি পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসন গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের সহায়তা করেন।

এদিকে পাকিস্তান সরকার তখন ঢাকার সামরিক আদালতে সরকারি কর্মকর্তাদের বিচার শুরু করেছে। রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধে। তার অবর্তমানে সামরিক আদালত তাকেসহ আরও ১৪ জন সিএসপি অফিসার আর ৩৬ জন ইপিসিএস অফিসারকে ১৪ বছরের জেল দিল। তাদের সবার সম্পত্তির ৫০ ভাগ বাজেয়াপ্ত করল।

তাঁর সরকারি চাকুরির বয়স তখন মাত্র চার বছর। দেশকে ভালোবেসে তিনি সেদিন মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি হয়েছেন একজন আইকন। যাপিত জীবনে শুদ্ধাচার, ঘটনার নির্মোহ বিশ্লেষণের ক্ষমতা এবং অগাধ পান্ডিত্যের এমন সমাহার বিরল। তাঁর লেখা বইসমূহ আমাদের চিন্তার দুয়ারে কষাঘাত করে, নতুন করে ভাবতে শেখায়।

একজন সফল আমলা, শিক্ষক, গবেষক, ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, প্রাবন্ধিক, অর্থনীতিবিদ – কোন উপাধিতেই তাঁকে সম্পূর্ণ ধারণ করা যায় না। প্রাচীন বাংলার ইতিহাস নিয়ে রিচার্ড ইটনের তত্ত্বও আকবর আলি খানের ব্যাখ্যার কাছে পর্যুদস্ত হয়। একজন মানুষের পক্ষে এমন বহুবিধ গুণের অধিকারী হওয়া কেবল কল্পনাতেই সম্ভব।

আমরা আপনাকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করব – স্যার।

——————————————————–

মাহমুদা খা ।

৭ thoughts on “একজন হিরোর প্রস্থানে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *