এক প্রবীণ শিল্পী “রেবা পাল “

এক প্রবীণ শিল্পী “রেবা পাল ” তার একচিলতে ঘরে বসে জানালেন চালচিত্র কথা। মাত্র১৬ বছর বয়সে স্বামীর ঘর করতে চলে এসেছিলেন শ্বশুরবাড়িতে।সেই পথ চলা শুরু। তিনি প্রায় ৫০ বছর ধরে এই চালচিত্র আঁকছেন। তার স্বামী ছিলেন বিখ্যাত চিত্রকর ষষ্ঠী পাল। তাঁর হাত ধরেই রেবা দিদার এই পেশায় আসা। অভাবের সংসার যাকে বলে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, এক চিলতে জমির উপর দু কামরার ঘর, বারান্দার এককোনে রান্না করার জন্য ঘিরে নিয়েছে, ছোট্ট উঠোন। এমনি করে চলছিল বেশ তাদের জীবন, বিয়ের এক বছরের মাথায় স্বামীর কাজের সাথে হাত মেলান সেখান থেকেই আস্তে আস্তে কাজ শেখেন।
স্বামী ষষ্ঠী পাল কলকাতায় বিভিন্ন ঠাকুরের কাজ করতেন এই ঠাকুরের কাজ সারা বছর থাকতো না,অবসর সময়ে এই দুর্গাপট আঁকতেন। আগে একচালার দুর্গা হত,তখন দুর্গাপটের চাহিদা ছিলো ভালোই সিজিনে কলকাতার পাইকার দের যোগান দিতে স্বামী স্ত্রী দুজনাই এই কাজে হাত লাগাতেন।
অগে এই বাড়ী থেকেই বিক্রি হতো, কয়েক বছর পর স্বামী ষষ্ঠী পাল এর একটা হাত দিয়ে কিছু করতে পারতেন না,তখন তিনি এই চালচিত্র ১০৫ কি.মি ট্রেনে করে এসে বিধাননগর বিক্রি করতে আসতেন একা।
তারপর স্বামী মারা গেলে আজ ও তিনি একাই চালিয়ে যান ভালোবেসে, রেবাদেবীর বয়স এখন ৭২। তার তিন মেয়ে এই আয় থেকেই তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেও এই কাজ করে ও কলকাতায় ঠাকুর গড়ার কাজ করেন। এখন তার ছেলে বউমারাও হাত লাগান এই চালচিত্র আঁকায়। অভাব দৈনিন্দিন, প্রিন্টেড চালচিত্র বাজার নষ্ট করে দিয়েছে, এখন আর সেরকম চাহিদা থাকেনা হাতে আঁকা চালচিত্রের,শিল্পীমন কোনোভাবেই বাঁধ মানেনা, কাজ করেন নিজের তাগিদে…।
চালচিত্র কি?
বহুকাল আগে বাংলায় দুর্গাপুজায় চালচিত্র ব্যবহার করা হত। চালচিত্র হল সাবেকি দুর্গা প্রতিমার উপরিভাগে অঙ্কিত দেবদেবীর কাহিনিমূলক পটচিত্র, যা প্রধানত অর্ধগোলাকৃতি হয়। তিনি আরও বলেন এতে কোনো সিন্থেটিক রঙ ব্যাবহার হয় না, প্রাকৃতিক রঙ ব্যাবহার করে এই চালচিত্র অঙ্কন করা হয়।তেঁতুলবিচির আঠা, খড়িমাটি, খবরের কাগজের ওপর প্রাকৃতিক রঙ দিয়ে শিব দুর্গার পরিবার, নন্দী ভৃঙ্গী,সখা সখী, আঁকা হয়।
কিন্তু কালের স্রোতে চালচিত্র হারিয়েছে তার আভিজাত্য এবং শিল্প-সূক্ষ্মতা। দিনে দিনে উধাও হয়েছে তার সাবেক জৌলুস। ভালো থেকো দিদা রেবা পাল। আরো অনেব বছর এভাবেই তোমার কাজ,বেঁচে থাকুক লোকশিল্পের পাতায়।
লেখক : অপু দাশ ।