অভিনেতা আমিরুল হক চৌধুরী সম্পর্কে আমরা কয়জন জানি ?

লুৎফর হাসান

তুলসী চক্রবর্তী প্রসঙ্গে সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন ‘তিনি যদি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করতেন, তবে অভিনয়ে অস্কার পেতেন’। ‘সাড়ে চুয়াত্তুর’ সিনেমা যতবার দেখেছি, ততবার তো দেখেছি তুলসী চক্রবর্তীর জন্যই। তো, আমাদের দেশের একজন অভিনেতাকে আমার এত বড় মনে হয়, অনেক বড়। তিনি আমিরুল হক চৌধুরী। তুলসী চক্রবর্তী সম্পর্কে যেমন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আফসোস করে বলেছিলেন ‘কমেডি অভিনয় দেখে কেউ তাকে কমেডিয়ান ভাবলে বড় অন্যায় হবে। আমাদের সিনেমায় খাঁটি অভিনেতা হিসেবে তুলসী চক্রবর্তী খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকবেন’। ঠিক এই কথাটা মনে পড়ে যায় অভিনেতা আমিরুল হক চৌধুরীর বেলাতেও। বৃন্দাবন দাসের রচনায় বিভিন্ন নাটকে আমরা তাকে যেভাবে দেখি, তাতে কেউ কেউ তাকে কমেডি অভিনেতা হিসেবে ভুল করেন। আদতে ওটা অভিনয়ের প্রকৃত অংশ। ওটা কোনও ভাঁড়ামি নয়।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ চলচ্চিত্রে তার সেই অভিনয় অনেক আগে দেখেছিলাম, এখনও স্পষ্ট মনে আছে, কী অসামান্য তার দখল! তবে বৃন্দাবন দাসের রচনায় সালাহউদ্দিন লাভলুর ‘হাড়কিপটে’ নাটকে তার অভিনয় বাংলা নাটকের গুণী অভিনেতাদের সেরা অভিনয়ের একটা মাইল ফলক হয়েই থাকবে। বাংলাদেশের অভিনয় শিল্পের দুই বিস্ময় প্রতিভা চঞ্চল চৌধুরী এবং মোশাররফ করিমের সঙ্গে ভাত খেতে বসে সেই যে আমীরুল হক চৌধুরীর অভিনয়, তা কি এই দেশের দর্শকেরা কোনোদিন ভুলতে পারবে?

এই লেখাটা কেন লিখলাম? কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছি, এদেশের সর্বকালের সেরা অভিনেতা বলা হচ্ছে এটিএম শামসুজ্জামান কিংবা হুমায়ূন ফরীদিকে। অথচ এই দেশেরই এক বলিষ্ঠ অভিনেতার নাম গোলাম মুস্তাফা, আরেক বলিষ্ঠ অভিনেতা খলিল। আলী যাকের কিংবা আসাদুজ্জামান নূর।

২০১৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর ব্রেক শেরম্যান তাঁর হলিউড অফিসে ডেকে নেন আমিরুল হক চৌধুরীকে। তাঁর সব নাট্য কর্মকাণ্ড মনিটরিং করে তিনি পুরস্কারটি দেন। পুরস্কারটি পেয়ে অবাক হয়েছিলেন আমিরুল হক। দেশের এক জাতীয় দৈনিকের এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ ব্যাপারে বলেন ‘আমি কোনো সিন্ডিকেটের সদস্য না হওয়ায় এই অর্জন সেভাবে দেশে প্রকাশ পায়নি’।

তিনি অভিনেতা না হলে কী হতেন? জানা যায়, আমিরুল হক চৌধুরী দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ঈশ্বরদী কলেজে পড়ার সময় ছাত্রসংসদের ভিপি ছিলেন। উনসত্তরের গণ-আন্দোলনের সময় ক্যাপ্টেন মনসুর আলী আমিরুল হককে পাকশীতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছিলেন। আমিরুল হক ৭০-এর নির্বাচনে সর্বকনিষ্ঠ এমপি হবার সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্ত নাট্যকলাতে অধিক আগ্রহ থাকায় তিনি রাজনীতিতে পা বাড়াননি। এই দেশের একজন জাতীয় নেতায় পরিণত হবার সব সুযোগ হাতের মুঠোয় থাকতেও তিনি বেছে নিয়েছিলেন অভিনয়কেই।

এই লেখাটা কেন লিখলাম? কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছি, এদেশের সর্বকালের সেরা অভিনেতা বলা হচ্ছে এটিএম শামসুজ্জামান কিংবা হুমায়ূন ফরীদিকে। অথচ এই দেশেরই এক বলিষ্ঠ অভিনেতার নাম গোলাম মুস্তাফা, আরেক বলিষ্ঠ অভিনেতা খলিল। আলী যাকের কিংবা আসাদুজ্জামান নূর। সালেহ আহমেদকে ভুলে গেলে চলবে? এই যুগে মোশাররফ করিম এবং চঞ্চল চৌধুরী। আছেন ফজলুর রহমান বাবু কিংবা শতাব্দী ওয়াদুদ। আছেন আহমেদ রুবেল অথবা আজাদ আবুল কালাম। এককভাবে কাউকে সেরা বলাটা সম্ভবত ঠিক না। ওটা অতি আবেগ। কাউকে সেরা বলে দিলে, আরও যারা সেরার কাতারে, তাদের অবস্থান দুর্বল না হলেও প্রজন্মের একাংশ সেটাই চর্চা শুরু করে এবং তা প্রতিষ্ঠা পায়, আর আড়ালে চলে যায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ নাম। যেমন এক জ্বলজ্বলে নাম আমিরুল হক চৌধুরী। এই গুণী অভিনেতার জন্য প্রার্থনা, তিনি যেন সুস্থ থাকেন। আমাদেরকে আরও অনেক সিনেমায় বা নাটকে দারুণ অভিনয় দিয়ে সমৃদ্ধ করেন।

লেখক : গায়ক । ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর , ধ্রুব মিউজিক স্টেশন।

৭৭ thoughts on “অভিনেতা আমিরুল হক চৌধুরী সম্পর্কে আমরা কয়জন জানি ?
লুৎফর হাসান

  1. Good dayYour article has truly amazed me, leaving a profound impression. Your remarkable talent for elucidating intricate ideas with clarity and expertise is truly commendable. I am eagerly looking forward to subscribing to your updates and following your future work. Thank you for your exceptional contribution, and I wholeheartedly endorse and encourage you to continue excelling in all your endeavors.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *