শোনা খবর মিথ্যাও হতে পারে। শোনাগেল, কিশোরগঞ্জে দুই পুলিশ কোয়ারেন্টাইন ভয় দেখিয়ে মানুষের নিকট থেকে টাকা নিচ্ছে। শোনাগেল কোয়ারেন্টাইন থেকে পালিয়ে গেছে সন্দেহ ভাজন ব্যক্তিটি, শোনাগেল কোয়ারেন্টাইনে রাখা এক লোককে শতশত মানুষ দেখতে এসেছে। শোনাগেল কোয়ারেন্টাইন এর ভয়ে পালিয়ে আছে মালেশিয়া ফেরত ব্যক্তিটি, ঘর থেকে বেড় হচ্ছেন না। শোনাগেল কোয়ারেন্টাইন থেকে পালানো ব্যক্তিকে চ্যাংদোলা করে এক হালি তরুন দল আবার কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে এসেছে, আবার তাদের কাধে নিয়ে উল্লাসে মেতেছে হাজার গ্রামবাসি। করোনা ভাইরাসের মাইরে বাপ আসেন আগে “কোয়ারেন্টাইন” বুইঝা লই ।
যারা সরকারি চাকরি করেন তারা কোয়ারেন্টাইন এর বাংলা অনেক আগে থেকেই ব্যবহার করে আসছেন তাদের ছুটির নীতিমালায় । সরকারি ছুটির নীতিমালায় একটি বিকল্প হলো “সঙ্গনিরোধ ছুটি ” সম্ভবত গুটিবসন্তর সময় এই ছুটির এই ধরন নীতিমালায় অন্তুর্ভূক্ত হয়েছিল। যদি কোন ব্যক্তির এমন কোনো রোগ হয় যা তার সংস্পর্শে আসলে অন্যদের ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে দফতর তাকে সংগ নিরোধ ছুটি দিয়ে দেয়। বাংলাদেশ চাকুরী আইনের/প্রথমখন্ড/১৯৬ ধারা মোতাবেক সরকারী কর্মচারীদেরকে সঙ্গনিরোধ (Quarantine leave) ছুটি ভোগ করার বিধান আছে। যে যে রোগে এই ছুটি ভোগ করা যাইবে তাহা হলো: (১) গুটি বসন্ত, (২) কলেরা,(৩) পেলগ, (৪) টাইফাস জ্বর ও (৫) সেরিব্রোস্পাইনাল মেনেনজষ্টাটিস। সুতরাং নিদৃষ্ট ব্যক্তির সঙ্গ নিদৃষ্ট ভাবে রোধ করা কেই সঙ্গনিরোধ বল যায়।
“ সঙ্গনিরোধ ” শব্দটির জাতির জন্য কঠিন মনে হচ্ছে, মনে হতে থাকুক এর আরো সহজ বাংলা ভাবতে ভাবতে জানাতে চাই “ সঙ্গনিরোধ ” পাগলা গারদ, জেলখানা কিংবা কোন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নয়, এটা একটি সতর্কতা মুলক ব্যবস্থা। আপনার নিকট থেকে কোনা জীবানু যাতে কোনভাবেই অন্যের কাছে না ছড়াতে পারে সে জন্য আপনার নিজথেকেই আপনার সঙ্গ থেকে অন্যকে দুরে রাখা উচিৎ। করোনা ঠান্ডা জরের মতো মনে করে আল্লাভরসা বলে জনসমাগমে না চলে ঘরে কিছুদিন একা থকতেই হবে আপনাকে। যেহেতু এই রোগের চিকিৎসা এখনো আবিষ্কার হয়নি, তাইে “ সঙ্গনিরোধ ” ছাড়া মহামারি ঠেকানোর আর কোন উপায় নেই। আর এ বিষয়ে আপনি যদি সিরিয়াস না থাকেন তাহলে আপনার পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে আপনার “সঙ্গনিরোধ” এগিয়ে আসতে হবে। এলাকার, পাড়ার, মহল্লার তরুনরা এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবা টিম গঠন করে বিষয়টি তদারকি করতে পারেন। করোনা প্রতিরোধে স্বেচ্ছাসেবক টিমের দায়িত্ব হলো, ১) বিদেশ থেকে কেও আসলে যাতে সে অন্যের সহচর্য এড়িয়ে চলতে পারে সে বিষয়ে সাহায্য করা। ২) কোন জন নেতা বিশাল সমারহে জীবনানশক মানুষের মাঝে বিলাতে (দিতে) চাইলে তা নিশব্দে গরিব, নিম্ন বিত্তদের মাঝে পৌছে দেওয়া। ৩) জরুরি ঔষুধপত্র সংগ্রহে সহায়তা করা। ৪) যদি এলাকায় অর্থনৈতিক ভাবে বিপন্ন (যেমন দিনমজুর) কেও থেকে থাকে তাদের সহায়তা করার জন্য ফান্ড কালেকশন করা। ৫) যদি কেও মারা যায় তার যথাযথ সৎকারের ব্যবস্থ করা ।
মক্কায় যেহেতু লোক সমাগম নিয়ন্ত্রিত, তাই জামাতের সাথে নামাজ পড়ার জন্য উত্তেজিত হবার দরকার নেই, দয়া করে এ বিষয়ে কোন দুষ্ট রাজনীতি করবেন না। আর যদি করনে তাহলে আপনি করোনার ভয়বহতা সম্পর্কে শুধু অজ্ঞ এবং মুর্খই নন আপনি সমাজের জন্য হুমকি স্বরুপ। ধর্মগুররা বিভ্রান্তকর ফতোয়া দেয়া থেকে বিরত থাকুন। ডিজিট্যাল বাংলাদেশে সবাই কিছুদিনের জন্য ডিজিট্যাল হয়ে যান।
“সঙ্গনিরোধ” এর সহজ বাংলা আর কি হতে পারে আসেন ভাবি এবার, পৃথকীকরন, আলাদা, একঘর , গৃহবন্ধী, নির্বাসন….। ভাল একটা নতুন নাম দেয়া যেতে পারে, যা শুনে আরাম লাগবে, বিশ্রাম লাগবে মনে হবে ঝিরঝির বাতাস বয়ে যাচ্ছে এরকম প্রতিশব্দ। আমার কাছে মনে হয় “ঘরকুণো” প্রতিশব্দটি কোয়ারেন্টাইন এর একটি আরামদায়ক প্রতিশব্দ হতে পারে।
অতএব “কোয়ারেন্টাইন” মানে “ঘরকুণো” । আগামী কিছুদিন আমরা আরামছে একদম ঘরের কোনা য় “ঘরকুনো”জীবন যাপন করবো।
লেখকঃ মাসুদ করিম । অ্যানিমেটর।
Latest posts by ড্রিমমেকার অনলাইন ম্যাগাজিন (see all)
- শর্ত - নভেম্বর ৫, ২০২৪
- উন্মুক্ত দরপত্রের নিয়ম না মেনেই জাতীয় যুব দিবসের কাজ দিয়ে দিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক - অক্টোবর ২৫, ২০২৪
- স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও খাদ্য: প্রত্যাশা’র সেইফ হেলথ কেয়ার প্রকল্পের লক্ষ্য ।
প্রত্যাশা’র নতুন উদ্যোগ: সেফ হেলথ কেয়ার প্রকল্প
- অক্টোবর ৯, ২০২৪