код

ইদানীং

মাসুদ করিম

এক

ইদানীং  আমার মন খারাপ থাকছে । ভাল থাকার কারণ গুলো আমাকে ভাল রাখছে না । আমি এক কাউন্সিলরের কাছে যাচ্ছি । রিকসার টুং টাং আওয়াজ চারপাশে । অনেক সার্চ করে ইয়াং এক মেয়ে কাউন্সিলরের সন্ধান পেয়েছি তার কাছে যাচ্ছি । মনের ভিতর দুরঅভিসন্ধি আছে ডিয়ার জিন্দেগি সিনেমার মতো কোন একটা কিছু ঘটবে । শাহরুরুখ খান আর আলিয়া ভাটের মতো কেমেস্ট্রি শুরু হবে আমাদের মাঝে । যদিও এ গল্পে চরিত্র ভিন্ন ।

রিকসায় যেতে যেতে বলে ফেলি আমার মন খারাপ থাকে কেন ।

প্রথম কারণ, আমাদের গ্রামের বাড়িতে সভা হবে । সভা হবে ভালো কথা, সভা কোন সমস্যা না , সভা ভালো জিনিসি। সমস্যা হলো সভার লিফলেট । লিফলেটে আমন্ত্রীত অতিথী ‍ বৃন্ধের যে নাম দেয়া হয়েছে সেখানে আমার নাম নাই । ছোট বড় সভার নাম দেয়া হয়েছে সেখানে, কিন্তু আমার নাম নাই । শুধু আমার নাম না আমার গ্রামের দোস্তোর ও নাম নাই । ব্যপারটি তুচ্ছর পর্যায়ে, কিন্তু আমার তুচ্ছ মনে হচ্ছে না, আমি অস্তিত্য সংকটে ভুগছি । মনে হচ্ছে মানুষ আমাকে সহজে ভুলে যায় । কি ভয়ানক ব্যপার । মানুষ হিসেবে আমি নিম্ন শ্রেনীর মনে হয় ।

দ্বিতীয় কারণ, রেবেকা অনেক দিন যাবৎ আমাকে অবহেলা করছে, ইগনোর করছে । ভুল বললাম, রেবেকা আমাকে ভুলে গেছে । আমাকে ভুলে যাবার, ঘৃনা করে দুরে সরে যাবার, অপমান করে ছুড়ে ফেলে দেবার অনেক সময় গেছে, কিন্তু সে সময় রেবেকা আমাকে কিছু বলেনি, পাশে থেকেছে, হাতে হাত রেখেছে । কিন্তু এখন সে আমাকে মনেই রাখতে পারছে না । অফিস শেষ হলেই সে আড্ডা দিতে যায় , হৈচৈ করে । আগেও যেত মাঝে মাঝে, কিন্তু ভুলে যেত না । নিয়োমিত আমাকে অনেক কিছুর আপডেট দিতে । কিন্তু এখন সে আপডেটতো দেয়ই না, উল্টা যে গুলো আমাকে বলার কথা সেটাও বলে নাা । মনে হয় কস্ট করে আমাকে মনে রাখছে । আমার ধারনা তার নতুন প্রেম হয়েছে বা হচ্ছে, যে ভাবনায় আমি ছিলাম সেখানে অন্য কেও ঢুকে গেছে, সে এখন আমার সময় গুলো দখল করবে । এমন পরিস্থিতিতে আমার শিষ্যদের আমি পরামর্শ দেই সরে আসার জন্য , চুপচাপ থাকার জন্য, নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য । কারণ এমন পরিস্থিতিতে যাই করা হবে তা ভুল হবে । যে কোন স্টেপ অপর পক্ষের জন্য বিরক্তিকর এবং রাগের কারণ হতে পারে । আমার অন্যতম শিষ্য বিজয় এর ভুক্তভোগী । সে আবেগি হয়ে দুরবর্তী জেলা শহরে বসবাসরত তার প্রাক্তন প্রেমিকাকে দেখতে গিয়েছিল । তার উদ্দেশ্য ছিল দুর থেকে দেখে চলে আসবে । কিন্তু সে পারলো না, সে পুরা লেজে গোবরে করে ফেলল । বিজয় ৫ ঘনটা অপেক্ষা শেষে রাত ১০ টার দিকে তার প্রাক্তন প্রেমিকাকে রিকসায় তার নব্য প্রেমিকের সাথে দেখে ফেলল । বিজয়ের প্রাক্তন প্রেমিকা এবং নব্য প্রেমিকও দেখে ফেলল । বিজয় হাউমাউ করে কান্না শুরু করলো, সেটা থামাতে হলো তার প্রাক্তন প্রেমিকার নব্য প্রেমিক কে । বিজয়ের এই আবেগিয় ঘটনায় তার প্রাক্তন প্রেমিকার বিরক্তি ৩০০ গুন বাড়িয়ে দিলো ।

তৃতীয় কারণ গুলো খুব ছোট ছোট, রিকশা বেলের টুং টাং শব্দে যে গুলো মাটিতে পরে মিশে যাবার কথা, কিন্তু মন খারাপের কারণ গুলো মিশে যাচ্ছেনা।

দুই

আমি রিকশা থেকে নেমে কাউন্সিলর প্রিয়ন্তীর বাসা কাম চেম্বারে প্রবেশ করলাম । আমি অপেক্ষা করছি । মিনিট দশেক পর একজন অল্প বয়সী মেয়ে ভিতর থেকে বেড় হয়ে , আপনাকে আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে, আফামনির মন খারাপ । আমি মেয়েটির কথা শুনে হো হো করে হেসে ফেলতে চাইলাম, কিন্তু হাসলাম না । ইতস্ততা নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কেন মন খারাপ?

বেড়ালের জন্য !

বিড়াল?

হুম, কয়েকদিন ধরে আমাদের বিড়াল টা পাওয়া যাচ্ছেনা । ( মেয়েটি সুন্দর, শুদ্ধ করে কথা বলে )

ওহ, সত্যিই অনেক দুখের বিষয় ।

কিছুক্ষণ পর, টুং করে বেল বেজে উঠলো । মেয়েটি বলল যান,ভিতরে যান । আমি ভিতরে ঢুকে চেয়ারে বসতে বসতে বললাম, বেড়ালের জন্য দুঃখিত ।

প্রিয়ন্তি দেখতে সুন্দরী এবং ফিটফাট, সে আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে বলল, আপনি আরাম করে বসে আপনার সমস্যাটি আমাকে খুলে বলুন ।

আমি হাসি আটকে রেখে বললাম, আমার মন খারাপ । কিন্তু আপনার মন খারাপ দেখে আর আমার সমস্যা বলতে ইচ্ছে করছে না ।

কেন?

যাকে বলবো, তারইতো মোন খারাপ?

হুম- কাউন্সিলর দেরও মন খারাপ হয়, এটা ভেবে অবাক হচ্ছেন ?

আমি একটু থেমে বললাম, না, আমার ধারনা, আপনি ইচ্ছা করে এই কাহিনী বানিয়েছেন, আপনি ইমপ্যাথিটিক কমিউনিকেশন করার জন্য, এই ছোট্র গল্প সাজিয়েছেন, আপনার মন খারাপ, আমারো মন খারাপ দুজন একই দলেল , সবার মন খারাপ হয়, নরমাল ব্যপার চিন্তার কিছু নাই । অ্যাপয়েন্ট নেবার সময় আমার সমস্যার হিন্টস অন্য কিছু থাকলে আপনি হয়তো অন্য গল্প ফাদতেন ।

প্রিয়ন্তি অবাক হয়েছে । সম্ভবত আমার মতো কিইস সে এই প্রথম পেল । তার ইগোতে লাগলো কিনা বুঝতে পারছি না । সে আমার মতামতের পক্ষে বা বিপক্ষে কিছু না বলে , বলল – এবার আপনার গল্প শুনি । কি নিয়ে আপনার মন খারাপ ?

আমি বলতে শুরু করলাম । মাঝখানে মেয়েটি এসে জানালো, বিড়ালটি পাওয়া গেছে । প্রিয়ন্তি আনন্দিত হলো, আমি দু:খিত হলাম । আমি বললাম, দু:খিত, আমি ভুল ভেবেছিলাম ।

প্রিয়োন্তি বলল, আমাদের মন ভালো না থাকার একটি বড় কারণ হলো, ভুল ভাবা, ভুল ভাবে চিন্তা করা । আপনি যে ভাবছেন, রেবেকা মটর সাইকেলে অন্যের সাথে ঘুরছে, ভাবছেন সে সন্ধ্যার পর অন্যের সাথে কথা বলছে, এই ভাবনা গুলোই আপনার ভালো না থাকার কারণ । আপনি সুন্দর ভাবনা ভাবুন । রেবেকাকে আপনি আপডেট দেন, তার কাছে জানতে চান ।

প্রিয়োন্তির বেশ কিছুক্ষ কথা বলতে থাকলো । আমি মেনে নিতে থাকলাম । প্রিয়ন্তি কিছু হোমওয়ার্ক দিয়ে তার সেশণ শেষ করলো । আমি উঠে চলে আসলাম ।

তিন

আসার সময় মেয়েটি কে জিজ্ঞাস করলাম তোমার নাম কি? মেয়েটি হেসে বলল, জুলেখা । জুলেখাকে পঞ্চাশ টাকা দিলাম চকলেট খাওয়ার জন্য, সে খুশি হয়ে আমাকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে আসলো । রিকাসায় চরে বসলাম, জুলেখা দাড়িয়ে আছে ।

রিকশা ছেড়ে দেবার মুর্হতে জুলেখা বলল, স্যার আমাদের কোন বিড়াল নাই ।

টুং টাং, টুং টাং ।।

( সমাপ্ত )

লেখক : মাসুদ করিম

ড্রিমমেকার অনলাইন ম্যাগাজিন
Latest posts by ড্রিমমেকার অনলাইন ম্যাগাজিন (see all)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *